মুক্তিপণে ব্যর্থ হলে পাচার করে দিচ্ছে মালয়েশিয়ায়

মুক্তিপণে ব্যর্থ হলে পাচার করে দিচ্ছে মালয়েশিয়ায়
রোহিঙ্গাসহ বাংলাদেশীদের অপহরণ ও নির্যাতন করে মুক্তিপণ আদায়ের ঘটনা দিন দিন বেড়েই চলেছে। তাদের বন্দিশালায় আটকে রেখে মুক্তিপণ দিতে ব্যর্থ হলে দালালরা অবৈধ সাগরপথে মালয়েশিয়ায় পাচার করে দিচ্ছে।
জানা যায়,অপহরণকারীরা বিভিন্ন জায়গায় ছদ্মবেশে সাধারণ মানুষকে ধরে নিয়ে আটকে রাখা হয় তাদের বন্দিশালায়। মুক্তিপণ না পেলে অন্য চক্রের কাছে থেকে কমপক্ষে তিন লাখ টাকার বিনিময়ে বিক্রি করে দেয় দালালরা।এরপর সশস্ত্র পাচারকারীরা তাদেরকে মিয়ানমার বা মালয়েশিয়ায় নিয়ে গিয়ে বন্দিশালায় জিম্মি করে মুক্তিপণ আদায় করে, নির্যাতনের অডিও – ভিডিও পরিবারের কাছে পাঠাই।
অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, কক্সবাজারের টেকনাফের ঝর্ণা চত্বরে রয়েছে অপহরণ চক্রের একাধিক সিএনজি ও টমটম। অপরিচিত কেউ তাদের সিএনজিতে উঠলেই বিপদ।তারা অপরিচিত যাত্রীদের বিভিন্ন কৌশলে নিয়ে যায় ভয় ও আতঙ্কের জায়গায়। সিএনজি চালকরা বিভিন্ন মেসেজের মাধ্যমে জানিয়ে দিলে তখন সে আস্তানায় অস্ত্র নিয়ে প্রস্তুত থাকে অপহরণকারী দল। তখন তাদের উপর মোটা অংকের টাকার জন্য তৃতীয় দফায় নির্যাতন করা হয়।
বান্দরবানের লাই চাকমা বলেন ,আমি কক্সবাজার ঘুরতে আসলে আমার বন্ধু রহিম আমাকে মোবাইল ফোনে বলছে টেকনাফে বেড়াতে আস। তখন আমি সিএনজি নিয়ে টেকনাফ শাপলা চত্বরে নামি। বন্ধু আব্দু রহিম বলে, বন্ধু চল বাড়িতে মা তোমার জন্য রান্না করে বসে আছে। তখন বন্ধুর মাকে সম্মান করে তার বাড়িতে চলে গেছি। মূলত আমাকে তার বাড়িতে নিয়ে যায়নি আরেকটি বাড়িতে নিয়ে গেছে। বন্ধু রহিম বলে, বন্ধু কেউ নেই তুমি বাড়িতে প্রবেশ কর। আমি বাড়িতে প্রবেশ করলে হঠাৎ এক মহিলা দা চুরি দিয়ে বলছে যা আছে সব কিছু বের করে দেয়।
পুলিশ ও জনপ্রতিনিধিরা বলছে ,কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার বাহারছড়া ইউনিয়নের মেরিন ড্রাইভসংলগ্ন পাঁচটি নৌ ঘাট থেকে মানুষ পাচার করা হয়। কচ্ছপিয়া করাচিপাড়া নৌঘাট, বড় ডেইলপাড়া ঘাট, শামলাপুর ঘাট, হাবিরচড়া ঘাট ও নোয়াখালীপাড়া ঘাট। এসব নৌঘাট দিয়ে বোটে ওঠানো হয়।প্রতিটি বোটে পাচারকারী চক্রের অন্তত ১০ জন করে সদস্য থাকে। যাদের কাজ হচ্ছে হুমকি দিয়ে ও মারধর করে বিদেশগামীদের কাছ থেকে টাকা আদায় ও জিম্মি করে রাখা।বাহারছড়া কচ্ছপিয়া গ্রামেই পাচারকারী চক্রের বিশাল আস্তানা রয়েছে পাহাড়ে। এই গ্রামে আছে কমপক্ষে ছয়টি বন্দিশালা। বিভিন্ন এলাকা থেকে লোকজনকে ধরে নিয়ে আটক করে রাখা হয় এসব বন্দিশালায়।
পাচারকারীদের নির্যাতনের গেল তিন মাসে দুজন মারা যায়। পাচারকারীদের মুক্তিপণ না দেওয়ায় গত ১৭ জানুয়ারি নির্মম নির্যাতনের শিকার হয়ে মারা গেছেন রহমতুল্লাহ। তিনি কক্সবাজারের রামু উপজেলার দক্ষিণ মিঠাছড়ি ইউনিয়নের চরপাড়া গ্রামের বাসিন্দা ছিলেন। গত (২২ মার্চ) মোহাম্মদ রাসেলকে মানবপাচারকারীদের নানা গোপন তৎপরতার তথ্য আইন-শৃংখলা রক্ষা সংস্থাগুলোর সদস্যদের জানানোয় তাঁকে হত্যা করা হয়েছে।
এদিকে কক্সবাজার জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (মিডিয়া)মোঃ জসীম উদ্দীন চৌধুরী বলেন, চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি এবং আইজি অপহরণের ঘটনা নিয়ে খুব উদ্বিগ্ন। তবে অপহরণ দুই ধরনের হয়ে থাকে একটি মাদকের লেনদেন আরেকটি জোরপূর্বক ধরে নিয়ে গিয়ে মুক্তিপণ আদায় করে যদি মুক্তিপণ দিতে ব্যর্থ হয় তাদের পাচার করে দিচ্ছে।আমরা নানামুখী অপহরণের ঘটনা বন্ধের জন্য কাজ করে যাচ্ছি এবং সামনে যৌথ অভিযান পরিচালনা করব।
টেকনাফ সদরের চেয়ারম্যান জিয়াউর রহমান জিহাদ বলেন, রোহিঙ্গাদের পাশপাশি বাংলাদেশী ও পর্যটক অপহরণের শিকার হচ্ছে। এখানে কিছু টমটম চালক ও সিএনজি চালক কৌশলে নিয়ে গিয়ে বিক্রি করে পেলে। তাদের অমানবিক নির্যাতন করে বিভিন্ন দেশে পাচার করে দিছে। এগুলো বন্ধের জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে আন্তরিকভাবে কাজ করার আহ্বান জানান