মঙ্গলবার, ১৭ই জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

শ্যামনগরে শতবর্ষে গিরিধরের চড়ক মেলা

রনজিৎ বর্মন শ্যামনগর(সাতক্ষীরা)প্রতিনিধিঃ

শ্যামনগরে শতবর্ষে গিরিধরের চড়ক মেলা

শ্যামনগরে শতবর্ষে গিরিধরের চড়ক মেলা

শ্যামনগরে শতবর্ষে গিরিধরের চড়ক মেলা

গ্রাম বাংলার আবহমান লোকায়াত সংস্কৃতির অন্যতম প্রধান অনুষঙ্গ হল মেলা। ধর্ম,বর্ণ গোত্র নির্বিশেষে সকল মানুষের মিলনক্ষেত্র হল মেলাঙ্গন। উপকূলের সুন্দরবন সংলগ্ন সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার মুন্সিগঞ্জ ইউপির জেলেখালী গ্রামের প্রত্যন্ত এলাকায় অনুষ্ঠিত হল দীর্ঘদিনের ঐতিহ্যবাহী শতবর্ষী গিরিধরের চড়ক মেলা।

চৈত্র সংক্রান্তির শেষ দিনে উৎসাহ ও উদ্দিপনার মধ্য দিয়ে ব্যাপক সংখ্যাক মানুষের অংশ গ্রহণে মেলাটি অনুষ্ঠিত হল। শ্যামনগর উপজেলা সদর থেকে ১২ কিলোমিটার দূরে জেলেখালী গ্রাম আর এই গ্রামের ছোট একটি পাড়ায় বসবাস ছিল গিরিধর মন্ডল নামক এক ব্যক্তি। তার নাম অনুসারে গিরিধরের চড়ক মেলা পরিচিত। তার পরিবারের পঞ্চম প্রজন্ম শিক্ষক দেবপ্রসাদ মন্ডল সুত্রে প্রকাশ ১৯২৫ সাল থেকে চড়ক মেলাটি শুরু হয়। ২০২৫ সালে এই মেলার শতবর্ষ পূর্ণ হয়। শতবর্ষ পূর্ণ হওয়ায় পরিবারের পক্ষ থেকে মেলাপ্রাঙ্গনে অতীত কিছু স্মৃতি উপস্থাপন করা হয় দর্শকদের সম্মুখে চিত্র আকারে।

শ্যামনগরে শতবর্ষে গিরিধরের চড়ক মেলা

২০২৫ সালের ১৪ এপ্রিল গিরিধরের মেলা প্রাঙ্গনে চড়ক পূজা দেখতে আসছিলেন ৬০ বছর বয়সের ব্যক্তি পরিমল মন্ডল, ৭০ বছর বয়সের রানী মৃধা তারা বলেন পূর্বে এ মেলার জৌলুস ছিল খুব। মাসাধিকাল পর্যন্ত মেলার ব্যাপ্তি থাকত। দিনে দিনে ১৫ দিন, এক সপ্তাহ এভাবে এখন এক দুই দিনে চলে এসেছে। গিরিধর মন্ডলের উত্তরসুরী দেবপ্রসাদ মন্ডল, নব মন্ডল বলেন তারা বাড়ীতে এমন কিছু কাগজ পত্রের সন্ধান পেয়েছেন যেখানে মেলাকে কেন্দ্র করে ঢাকা সহ বিভিন্ন এলাকা থেকে যাত্রা, সার্কাস বা পুতুল নাচ আসত। মেলাকে কেন্দ্র করে প্রশাসনের নিকট থেকে অনুমতি গ্রহণের পাশ, ব্যবসায়ীদের দোকান বসানোর অনুমতিপত্র সহ অন্যান্য কাগজপত্র পাওয়া গেছে। চড়ক মেলাকে কেন্দ্র করে অনেকের পূর্ব থেকে প্রস্ততি গ্রহণ করতে হত ব্যবসা বাণিজ্য পরিচালনা, যাত্রা, সার্কাস ইত্যাদি পরিচালনার জন্য। গিরিধরের চড়ক মেলা অর্থনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় সম্প্রীতির মিলন মেলা। সেই ১৯২৫ সালে ছিলনা ভাল যোগাযোগ ব্যবস্থা। তখন নৌকা, গরুর গাড়ী এসব করেই অনেকেই মালামাল নিয়ে আসতেন।

আরও পড়ুন  শ্যামনগরে যৌথবাহিনীর অভিযানে গাঁজা সহ গ্রেফতার-৩

এবছর এই মেলাকে কেন্দ্র করে চৈত্র সংক্রান্তির দিনে চড়ক পূজা শেষে ধর্মীয় যাত্রা পালার আয়োজন করা হয় পরিবারের পক্ষ থেকে। এছাড়া চড়ক পূজার স্থানটি সাজানো হয় বিভিন্ন সাজ সজ্জার মধ্য দিয়ে ধর্মীয় ভাব গাম্ভীর্যতার সাথে। সাথে সাথে নিরাপত্তার জন্য উপজেলা প্রশাসনের সহায়তাও গ্রহণ করা হয়।

চড়ক উৎসব হল শিবের পূজা। এখানে ৯/১০ দিন ব্যাপী ধর্মীয় পালা পার্বন বা পূজা পার্বনের আয়োজন থাকে। সব মিলিয়ে গিরিধরের চড়ক মেলা দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের এক ইতিহাসখ্যাত চড়ক মেলা হিসাবে সর্বজন স্বীকৃত মেলা

WhatsApp
Facebook
Twitter
LinkedIn
Email
Telegram