| ৪ আগস্ট ২০২৫
শিরোনাম:

রিয়েল এস্টেটে প্রতারণার মহোৎসব: সাইনবোর্ডেই কোটি টাকার ফাঁদ, গ্রাহকদের দাবি মনিটরিং সেল গঠন

রিয়েল এস্টেটে প্রতারণার মহোৎসব: সাইনবোর্ডেই কোটি টাকার ফাঁদ, গ্রাহকদের দাবি মনিটরিং সেল গঠন

রিয়েল এস্টেটে প্রতারণার মহোৎসব

বাংলাদেশের রিয়েল এস্টেট খাত এখন যেন এক ‘অদৃশ্য প্রতারণার কারখানা’। জমি নেই, বৈধ অনুমোদন নেই, কোনো স্থায়ী ঠিকানাও নেই—তবুও ঝাঁ-চকচকে বিজ্ঞাপন, চটকদার প্রস্তাব আর সাজানো অফিস দিয়ে সাধারণ মানুষের কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করছে কিছু অসাধু রিয়েল এস্টেট কোম্পানি। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় কিছু প্রতিষ্ঠান এখন সাইনবোর্ডভিত্তিক ব্যবসা পরিচালনা করছে, যার পেছনে নেই কোনো বাস্তব ভিত্তি।

রিয়েল এস্টেটে প্রতারণার মহোৎসব

ভুয়া অফিস, বড় সাইনবোর্ড, লোভনীয় অফার
প্রতারণার ধরন এখন আরও আধুনিক এবং পরিকল্পিত। অনেক কোম্পানি বিভিন্ন জনবহুল এলাকায় একটি ছোট অফিস ভাড়া নেয়, সামনে ঝলমলে সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে দেয়। তারপর শুরু হয় বিপুল পরিমাণ বিজ্ঞাপন—ফেসবুক, ইউটিউব, পত্রিকা, বিলবোর্ড, রাস্তায় ব্যানার—সব জায়গায় “সাশ্রয়ী দামে প্লট বা ফ্ল্যাট” অফার।

এই সব কোম্পানি এমন সব জায়গায় প্রকল্প দেখায় যা বাস্তবে হয়তো সরকারি জমি, খাসজমি বা এখনও কেনাই হয়নি। গ্রাহকদের “আজ বুক করলে কালই ডিসকাউন্ট”, “মাত্র ১০% ডাউন পেমেন্টে প্লট”, “ইন্সট্যান্ট রেজিস্ট্রেশন”—এই ধরনের প্রতিশ্রুতির মাধ্যমে আকৃষ্ট করে। শুরুতে কিছু ডকুমেন্ট দেখিয়ে গ্রাহকের আস্থা অর্জন করে, কিন্তু পরে টাকার পর টাকা নিয়েও কোনো রেজিস্ট্রেশন বা জমি হস্তান্তর করে না।

গ্রাহকরা বলছেন—এ যেন এক প্রাতিষ্ঠানিক প্রতারণা
ভুক্তভোগীরা বলছেন, এই প্রতারণা যেন রীতিমতো সংগঠিত একটি অপরাধচক্রের মতো। চট্টগ্রামের হালিশহর এলাকার এক গ্রাহক বলেন, “আমি ২০২১ সালে ঢাকার একটি রিয়েল এস্টেট কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি করি। তারা বলেছিল ৬ মাসের মধ্যে রেজিস্ট্রেশন হবে। আজ তিন বছর কেটে গেছে, অফিসে গেলে কেউ ফোন তোলে না, অফিসও এখন আর খোলা নেই।”

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সাবেক মার্কেটিং অফিসার বলেন, “অনেক কোম্পানি আমাদের বলত শুধু বুকিং আনো। জমি নাই, রেজিস্ট্রেশন হবে না, এটা আমরা জানতাম। চাকরির জন্য করতে হতো। যেদিন গ্রাহক বুঝে যেত প্রতারণা হচ্ছে, তার পরদিনই অফিস বন্ধ করে দিত কোম্পানি।”

কর্মচারীদেরও করুণ পরিণতি
এই প্রতারক কোম্পানিগুলো তাদের নিজস্ব কর্মচারীদের প্রতিও চরম অমানবিক আচরণ করছে। নিয়োগ দেয় ছাঁটাইয়ের ভয়ে, দেয় না বেতন, মাসের পর মাস মিথ্যা আশ্বাসে আটকে রাখে। কেউ প্রতিবাদ করলে চাকরি থেকে বাদ, আবার কেউ কেউ তো কোম্পানির পক্ষে গ্রাহকের টাকা নিয়েই উধাও।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন—নিয়ন্ত্রণহীন এই খাত ধ্বংস ডেকে আনছে
অর্থনীতি ও আবাসন বিশ্লেষকরা বলছেন, এভাবে যদি রিয়েল এস্টেট খাত চলতে থাকে, তাহলে ভবিষ্যতে এই খাত থেকে কেউ আর আস্থা নিয়ে বিনিয়োগ করবে না। সরকারকে এখনই কঠোর নজরদারি ও নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠান দিয়ে প্রতিটি কোম্পানির লাইসেন্স, প্রকল্প ও আর্থিক অবস্থা যাচাই করতে হবে।

রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (REHAB)-এর সদস্যপদ রয়েছে এমন কিছু কোম্পানি এবং সদস্যপদ না থাকা কোম্পানিগুলোর ওপর বিশেষ নজরদারি, ভুয়া প্রকল্প বন্ধ, এবং প্রতারণার দায়ে কঠোর আইনি ব্যবস্থা নেওয়া এখন সময়ের দাবি। বিশেষ করে রিয়েল এস্টেট কোম্পানির নজরদারিতে বিশেষ মনিটরিং সেল গঠন করা অতিব জরুরীরে হয়ে পড়েছে রাষ্ট্রীয়ভাবে এটি মনে করছেন গ্রাহক এবং বিশেষজ্ঞরা।
রিয়েল এস্টেট খাত মানুষের জীবনের সঞ্চয়ের জায়গা—একটি বাড়ির স্বপ্ন নিয়েই তারা ফ্ল্যাট বা প্লট কেনে। এই স্বপ্নকে ভেঙে চুরমার করে দিচ্ছে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী। সরকার, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী এবং গণমাধ্যমের সম্মিলিত ভূমিকা ছাড়া এই প্রতারণা থামানো সম্ভব নয়। মানুষ যেন প্রতারিত না হয়, সে জন্য জরুরি নিয়ন্ত্রণ, সচেতনতা এবং বিচার।
এমন অবস্থায় সরকারের কাছে রিয়েল এস্টেট কোম্পানিগুলোর কার্যক্রমে নজরদারির জন্য একটি কেন্দ্রীয় মনিটরিং সেল গঠনের দাবি উঠেছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যেমনটি দেশের ইন্স্যুরেন্স খাত একসময় বেপরোয়া হয়ে উঠেছিল, তখনই রাষ্ট্রীয়ভাবে একটি রেগুলেটরি সংস্থা— বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড রেগুলেটরি অথরিটি (আইডিআরএ) গঠন করে নিয়ন্ত্রণ আনা হয়। ফলস্বরূপ, ইন্স্যুরেন্স খাতে কিছুটা শৃঙ্খলা ফিরে আসে।
ঠিক তেমনি, বর্তমানে রিয়েল এস্টেট খাতে প্রতারণা, দুর্নীতি ও অনিয়ম ঠেকাতে এখনই একটি সুশৃঙ্খল ও শক্তিশালী মনিটরিং সেল গঠন করা সময়ের দাবি। এটি না হলে, এই খাতটি একসময় পুরোপুরি অনিয়ন্ত্রিত হয়ে পড়বে বলে আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

প্রস্তাবিত এই মনিটরিং সেল রিয়েল এস্টেট কোম্পানিগুলোর প্রকল্প অনুমোদন, অর্থ লেনদেন, গ্রাহকদের সঙ্গে চুক্তি, নির্ধারিত সময়ে হস্তান্তর এবং গ্রাহক অভিযোগ নিষ্পত্তির বিষয়গুলো তদারকি করবে। এতে এই খাতে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত হবে বলে মত বিশ্লেষকদের।

একটি ক্রেতা অধিকার সংগঠনের মুখপাত্র জানান, “আমরা প্রতিনিয়ত রিয়েল এস্টেট সংক্রান্ত জটিলতা ও প্রতারণার অভিযোগ পাচ্ছি। অনেকেই বছরের পর বছর অপেক্ষা করেও ফ্ল্যাট পান না, আবার কেউ কেউ ঠকেন টাকা দিয়েও জমি না পেয়ে। তাই সরকারের উচিত এখনই এই খাতটি সুশৃঙ্খল করতে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া, যেমনটা ইন্স্যুরেন্স খাতের ক্ষেত্রে নেওয়া হয়েছিল।”
প্রসঙ্গত, রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় গড়ে উঠেছে শত শত রিয়েল এস্টেট কোম্পানি। তবে, এদের অনেকেই নেই সঠিক অনুমোদন, আর্থিক সক্ষমতা বা পর্যাপ্ত সম্পদ। ফলে প্রতারণার শিকার হচ্ছেন সাধারণ মানুষ এবং বিনিয়োগকারীরা।

আরও পড়ুনঃ আজ এবং আগামীকাল থেকে সারা দুনিয়া বাংলাদেশকে চিনবে

রূপগঞ্জে অনুমোদনহীন ‘প্রিমিয়াম টাউন’ প্রকল্প: প্রিমিয়াম হোল্ডিং লিমিটেডের প্রতারণার ফাঁদে বিনিয়োগকারীরা

রিয়েল এস্টেটে প্রতারণার মহোৎসব: সাইনবোর্ডেই কোটি টাকার ফাঁদ, গ্রাহকদের দাবি মনিটরিং সেল গঠন

রূপগঞ্জের কৃষিজমির ওপর অনুমতি ছাড়াই সাইনবোর্ড বসিয়ে চলছে অনুমোদনহীন অবৈধ প্রিমিয়াম টাউন প্রকল্পের প্রতারণা।

রাজধানীর অদূরে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে আবাসন খাতে ভয়াবহ অনিয়ম ও প্রতারণার চিত্র উন্মোচিত হয়েছে। প্রিমিয়াম হোল্ডিং লিমিটেড নামের একটি কোম্পানি ২০২১ সাল থেকে অনুমোদন ছাড়াই ‘প্রিমিয়াম টাউন’ নামে কথিত আবাসন প্রকল্প চালাচ্ছে। রাজউক, জেলা প্রশাসন বা স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের কোনো অনুমোদন না নিয়েই গ্রাহকদের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।কৃষিজমির ওপর অনুমোদনহীন ‘প্রিমিয়াম টাউন’ প্রকল্পের সাইনবোর্ড

সাইনবোর্ডের আড়ালে প্রতারণাঃ

কথিত প্রকল্পটি রূপগঞ্জ উপজেলার দাউদপুর ইউনিয়নের আগলা গ্রামের আগলা মৌজায় অবস্থিত। সেখানে বাস্তবে কোনো উন্নয়ন কাজ নেই। শুধু সাইনবোর্ড বসিয়ে বুকিংয়ের নামে চলছে অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার মহোৎসব।

স্থানীয় জমির মালিক আলাউদ্দিন, চান মিয়া ও সিরাজ বেপারী ক্ষোভ প্রকাশ করে আবাসন নিউজ২৪- কে বলেন—
আমাদের অনুমতি ছাড়াই কৃষিজমিতে সাইনবোর্ড বসানো হয়েছে। প্রতিবাদ করলে সন্ত্রাসী দিয়ে ভয় দেখানো হয়। জমি আমাদের একমাত্র সম্বল, অথচ সেটির ওপর ভুয়া প্রজেক্টের নাম দিয়ে প্রতারণা চলছে। তারা আরও অভিযোগ করেন, কোম্পানির মালিকরা দালালের মাধ্যমে ভুয়া কাগজ কিনছে। এসব কাগজে নামমাত্র দলিল থাকলেও খতিয়ান/হোল্ডিং এ জমি নেই। গ্রাহকদের বলা হচ্ছে, রেজিস্ট্রেশন পেলেই তো আপনি জমি পেয়ে গেলেন। কিন্তু এই জমি কখনো হস্তান্তর করা সম্ভব নয়।

 

গ্রাহকেরা বলছেন—আইনগত ব্যবস্থা নিয়েছিঃ

মাদারীপুরের গ্রাহক আব্দুল্লাহ মজুমদার (প্রবাসী, ইতালি) বলেন,
বিদেশ থেকে টাকা পাঠানোর পর রেজিস্ট্রেশনের জন্য গেলে নানা অজুহাত দেখানো হয়। পরে সরাসরি অফিসে গেলে আমাকে হুমকি দেওয়া হয়— মামলা করলে খারাপ হবে। আমি এখন আইনগত ব্যবস্থা নিয়েছি।

সিলেটের গ্রাহক মোহাম্মদ রাশেদুল ইসলাম বলেন,
আমি গত বছর বুকিং দিই। তারা প্রতিশ্রুতি দেয় ছয় মাসের মধ্যে রেজিস্ট্রেশন হবে। কিন্তু আজও কিছু হয়নি। অফিসে গিয়ে জিজ্ঞেস করলে শুধু বলা হয় আর কিছুদিন সময় লাগবে কাগজপত্র ঠিক করা হচ্ছে রেজিস্ট্রেশনের জন্য। এভাবে আবার মাসের পর মাস চলে যায় তবুও তারা রেজিস্ট্রেশন দিচ্ছে না সকল টাকা পরিশোধের পরেও। প্রতারিত হয়েছি তাই কোন উপায় না পেয়ে আমি কোর্টে মামলা করেছি।

সাতক্ষীরার গ্রাহক সালমা আক্তার বলেন,
বিজ্ঞাপন দেখে টাকা দিয়েছিলাম। পরে বুঝলাম খতিয়ান মিলছে না। বারবার অফিসে গিয়েও সমাধান পাইনি। আমি লিখিত অভিযোগ করেছি এবং আইনি পদক্ষেপ নিয়েছি।

 

কোম্পানির আর্থিক অসঙ্গতি ও সন্দেহজনক প্রোফাইলঃ

রেজিস্ট্রার অব জয়েন্ট স্টক কোম্পানিজের তথ্য অনুযায়ী, প্রিমিয়াম হোল্ডিং লিমিটেড নিবন্ধিত হয়েছে ২০২১ সালের ১ আগস্ট (নিবন্ধন নম্বর: সি-১৭২৭৭১)। অথরাইজড মূলধন ১ কোটি টাকা এবং পেইড-আপ মূলধন ৫০ লক্ষ টাকা হলেও এখনো সেই অর্থ ব্যাংকে জমা হয়নি।

কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদে রয়েছেনঃ

(১).নূর মোহাম্মদ, চেয়ারম্যান – ২৫০০ শেয়ার (২).মোঃ রওশন আল মাহমুদ, ব্যবস্থাপনা পরিচালক – ৪৭,০০০ শেয়ার এবং (৩).নাজনীন আক্তার, পরিচালক-৫০০ শেয়ার।

গুরুত্বপূর্ণ তথ্যঃ ২০২১ সালের পূর্বে মালিকদের কোনো ধরনের টিআইএন সার্টিফিকেট ছিল না। অথচ এখন তারা কোটি কোটি টাকার মালিক। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শুধু কোম্পানি নিবন্ধন করে কোনো বিনিয়োগ ছাড়া সাইনবোর্ড ভাড়া নিয়ে প্রতারণা করা হচ্ছে।

 

প্রকল্প অনুমোদনবিহীন—ইউনিয়ন পরিষদের মন্তব্যঃ

দাউদপুর ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আব্দুর রাজ্জাক সিকদার বলেন—
২০২১ সাল থেকে এরা অবৈধভাবে প্রকল্প চালাচ্ছে। আমাদের কাছ থেকে কোনো অনুমোদন নেয়নি। আমরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে জানিয়েছি, দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

 

ব্যবস্থাপনা পরিচালকের বিতর্কিত বক্তব্যঃ

প্রিমিয়াম হোল্ডিং লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ রওশন আল মাহমুদ বলেন—
আমরা মাত্র চার বছর হলো প্রকল্পের কাজ শুরু করেছি। অনুমোদনের প্রক্রিয়া শেষ করতে পারিনি। অনেক কোম্পানি আছে যারা ২০ বছর ধরে কাজ করছে, তাদেরও সব কাগজপত্র হয়নি। আমরা ভবিষ্যতে অনুমোদন নেব। আপনারা নেতিবাচক সংবাদ করবেন না, বরং অফিসে এসে দেখা করুন।

তাকে প্রশ্ন করা হয়—দাউদপুর ইউনিয়ন পরিষদ থেকে এনওসি নিয়েছেন কিনা? এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বিষয়টি এড়িয়ে যান এবং বলেন, “আমি ব্যস্ত আছি।” পরে তিনি ফোন কেটে দেন।

 

প্রশাসনের কঠোর অবস্থানঃ

নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সিনিয়র সহকারী কমিশনার (ভূমি অধিগ্রহণ) টিএম রাহসিন কবির আবাসন নিউজ২৪- কে বলেন—
প্রিমিয়াম হোল্ডিং লিমিটেড  জমি অধিগ্রহণের অনুমোদন নেয়নি। অনুমোদন ছাড়া কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়া সম্পূর্ণ বেআইনি। অভিযোগ পেলে আমরা দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা নেব।

রূপগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ সাইফুল ইসলাম বলেন—আমরা মৌখিকভাবে জেনেছি প্রিমিয়াম হোল্ডিংস লিমিটেড অবৈধভাবে গ্রাহকদের কাছ থেকে টাকা নেওয়া হচ্ছে। এ ঘটনার সত্যতা পেলে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে প্রিমিয়াম হোল্ডিংস লিমিটেডের বিরুদ্ধে।

রূপগঞ্জের সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোঃ তারিকুল আলম বলেন—
প্রিমিয়াম হোল্ডিংস লিমিটেডের  জমি অধিগ্রহণের কোন অনুমোদন দেওয়া হয়নি। যদি অনুমোদন ছাড়া অবৈধ প্রকল্পে জমি বিক্রি করেন এ বিষয়ে অভিযোগ পেলে তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। অনুমোদন ছাড়া কোনো প্রকল্প চালানো আইনত অপরাধ।

রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার মোঃ রিয়াজুল ইসলাম বলেন—
রাজউকের অনুমোদন ছাড়া কোনো প্রকল্প চালানো বেআইনি। প্রিমিয়াম হোল্ডিংস লিমিটেডের কোন প্রকল্প রাজউক থেকে অনুমোদন দেওয়া হয়নি। বিনিয়োগকারীদের সতর্ক থাকতে হবে। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। তিনি এ অনুমোদনহীন প্রকল্প থেকে বিনিয়োগকারীদের প্লট কেনা থেকে সতর্ক করেন।

 

বিশেষজ্ঞের সতর্কবার্তাঃ

সাবেক এক রাজউক কর্মকর্তা বলেন—
প্রিমিয়াম হোল্ডিংস লিমিটেডের মতো কোম্পানিগুলো কখনো গ্রাহকদের জমি হস্তান্তর করতে পারবে না। তারা শুধুমাত্র শত কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে একসময় অদৃশ্য হয়ে যাবে। বিনিয়োগকারীদের সতর্ক থাকতে হবে।

 

আইন বিশেষজ্ঞের মতামতঃ

ব্যারিস্টার কামরুল হাসান বলেন—
স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়, জেলা প্রশাসক এবং রাজউকসহ আরোও প্রয়োজনীয় অনুমোদন ছাড়া কোনো আবাসন প্রকল্প চালানো অপরাধ। এ ধরনের কর্মকাণ্ড দণ্ডবিধি অনুযায়ী ফৌজদারি অপরাধ এবং শাস্তিযোগ্য।

 

দুদকের সতর্কবার্তা

দুর্নীতি দমন কমিশনের মহাপরিচালক (বিশেষ তদন্ত) মীর মোঃ জয়নুল আবেদিন শিবলী বলেন—
অভিযোগ পেলে দুদক অবশ্যই তদন্ত করবে। অনুমোদন ছাড়া জমি বিক্রি করে গ্রাহক প্রতারণা গুরুতর অপরাধ।

পান্থ হত্যা মামলা মেনন ইনু ও পলককে আদালতে গ্রেপ্তার দেখানো হলো

রিয়েল এস্টেটে প্রতারণার মহোৎসব: সাইনবোর্ডেই কোটি টাকার ফাঁদ, গ্রাহকদের দাবি মনিটরিং সেল গঠন

এইচএসসি পরীক্ষার্থী মাহাদী হাসান পান্থ হত্যার অভিযোগে কদমতলী থানায় দায়ের হওয়া মামলায় সাবেক সমাজকল্যাণ মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন, সাবেক তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু ও সাবেক আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলককে গ্রেপ্তার দেখানোর আদেশ দিয়েছে আদালত।

সোমবার (৪ আগস্ট) ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. সেফাতুল্লাহ শুনানি শেষে এই আদেশ দেন।

সকালেই তিনজনকে আদালতে হাজির করা হয়। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কদমতলী থানার উপ-পরিদর্শক মো. আরিফ হোসেন তাদের গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন করেন। এরপর সকাল সাড়ে ১০টার দিকে পুলিশের কড়া প্রহরায় আদালতের সামনে হাজির করা হয় অভিযুক্তদের।

আদালতের সিঁড়ি বেয়ে উঠার সময় মেনন, ইনু এবং পলক—এই তিনজনই ক্লান্ত হয়ে পড়েন। ইনু জানান, তার হৃদযন্ত্রে সমস্যা রয়েছে, ফলে কিছু সময় থেমে যান তারা। পরে আদালতের তৃতীয় ও চতুর্থ তলায় উঠে কাঠগড়ায় দাঁড়ান তারা। শুনানি শেষে বিচারক তাদের গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন অনুমোদন করেন।

এরপর পুলিশের প্রহরায় তাদের পঞ্চম তলার লিফট হয়ে হাজতখানায় পাঠানো হয়।

 মামলার পটভূমি: ২০২৪ সালের ১৯ জুলাই, ঢাকার কদমতলী এলাকায় জুলাই আন্দোলনের সময় তোলারাম কলেজের এইচএসসি পরীক্ষার্থী মাহাদী হাসান পান্থ গুলিবিদ্ধ হন। অভিযোগ অনুযায়ী, আন্দোলনের সময় আসামিদের ছোড়া গুলিতে মাহাদীর মুখ দিয়ে গুলি ঢুকে মাথার পেছন দিয়ে বেরিয়ে যায়।

পরবর্তীতে ৮ নভেম্বর কদমতলী থানায় এই হত্যাকাণ্ডের মামলা দায়ের করা হয়, যেখানে রাশেদ খান মেনন (৭ নম্বর), ইনু (৮ নম্বর), ও পলক (৯ নম্বর) হিসেবে এজাহারভুক্ত আসামি।

চাঁ’দা’বা’জি’র দায় স্বীকার আমি গরিবের ছেলে টাকার লোভ সামলাতে পারিনি জবানবন্দিতে রিয়াদ

রিয়েল এস্টেটে প্রতারণার মহোৎসব: সাইনবোর্ডেই কোটি টাকার ফাঁদ, গ্রাহকদের দাবি মনিটরিং সেল গঠন

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সম্মিলিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক আব্দুর রাজ্জাক রিয়াদ ঢাকার গুলশানে চাঁদাবাজির মামলায় দায় স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন। রোববার (৩ আগস্ট) সাত দিনের রিমান্ড শেষে তিনি ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. সেফাতুল্লাহর আদালতে স্বেচ্ছায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।

জবানবন্দিতে রিয়াদ বলেন,

“আমি গরিবের ছেলে। টাকার লোভ সামলাতে পারিনি।”

এর আগে, ২৬ জুলাই গুলশানের নিজ বাসায় সাবেক এমপি শাম্মী আক্তারের কাছে চাঁদাবাজির অভিযোগে তাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরে তাকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়।

ঘটনার বিস্তারিত বিবরণ: জবানবন্দিতে রিয়াদ জানান, তিনি ও তার সহকর্মীরা ১৭ জুলাই রাতে গুলশান থানার ডিসিকে ফোন করে শাম্মীর অবস্থান জানান। পরে পুলিশের অনুমতি পেয়ে তারা ফজরের আযানের পর অভিযান চালান। শাম্মী বাসায় না থাকলেও অভিযানে অংশ নেওয়া জানে আলম অপু তার বাসা থেকে একটি এয়ারপড নিয়ে আসেন, যা পরে ফেরত দেওয়া হয়।

তবে পরবর্তীতে সকালে আবারও গিয়ে তারা শাম্মীর স্বামী আবু জাফরের কাছে ৫০ লাখ টাকা দাবি করেন। টাকা না থাকায় তিনি ১০ লাখ টাকা দেন, যা রিয়াদ ও অপু ভাগ করে নেন।

পরে বাকি ৪০ লাখ টাকা আদায়ে ইব্রাহিম হোসেন মুন্না, সিয়াম, সাদমানসহ আরও তিনজনকে ওই বাসায় পাঠানো হয়। পুলিশের পরামর্শে রিয়াদ নিজেও সেখানে যান। তখনই পুলিশ হাতেনাতে টাকাসহ তাদের গ্রেপ্তার করে।

 আদালত নির্দেশনা ও আটক: রোববার চার আসামিকে আদালতে হাজির করা হয়। এ সময় রিয়াদ স্বেচ্ছায় জবানবন্দি দিতে সম্মত হন। আদালত তার জবানবন্দি রেকর্ড করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।

বাকিদের—মো. ইব্রাহিম হোসেন, সাকাদাউন সিয়াম ও সাদমান সাদাব—কারাগারে পাঠানো হয় ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. জিয়াদুর রহমানের আদেশে। অভিযুক্ত সকলকে তাদের সংগঠন থেকেও বহিষ্কার করা হয়েছে।

×