
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাম্প্রতিক শুল্ক নীতির কারণে বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে। এই পরিবর্তন বাংলাদেশসহ তেল আমদানিকারক দেশগুলোর জন্য সুফল বয়ে আনতে পারে। তবে বাস্তবে বাংলাদেশ কতটা লাভবান হবে, তা নির্ভর করবে বিভিন্ন অর্থনৈতিক ও নীতিগত উপাদানের ওপর।
বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম কমার কারণ
বিশ্ববাজারে তেলের দামে ওঠানামা প্রায়ই বৈশ্বিক রাজনীতি ও অর্থনৈতিক নীতির সঙ্গে সম্পর্কিত। সম্প্রতি ট্রাম্প প্রশাসনের বর্ধিত শুল্ক নীতির ফলে বৈশ্বিক সরবরাহ শৃঙ্খলে অস্থিরতা তৈরি হয়েছে, যার ফলে চাহিদা কমেছে এবং মূল্য হ্রাস পেয়েছে।
ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েট (WTI) ক্রুড তেলের দাম ব্যারেলপ্রতি ৬০ ডলারের নিচে নেমে এসেছে, যা আগের তুলনায় প্রায় ১৫% কম। অন্যদিকে, ব্রেন্ট ক্রুডের দামও উল্লেখযোগ্য পরিমাণে হ্রাস পেয়েছে। এই পরিস্থিতিতে তেল আমদানিকারক দেশগুলো তুলনামূলক কম ব্যয়ে জ্বালানি সংগ্রহ করতে পারবে।

বাংলাদেশের ওপর সম্ভাব্য প্রভাব
বাংলাদেশ বছরে বিপুল পরিমাণে জ্বালানি তেল আমদানি করে, যা দেশের অর্থনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। বিশ্ববাজারে দাম কমলে বাংলাদেশ নিম্নলিখিত সুফল পেতে পারে:
- আমদানি ব্যয়ের হ্রাস: তেলের দাম কমার ফলে বাংলাদেশ কম খরচে তেল আমদানি করতে পারবে, যা বৈদেশিক মুদ্রার সাশ্রয়ে সহায়তা করবে।
- জ্বালানির খরচ কমলে শিল্প ও পরিবহন খাতে ইতিবাচক প্রভাব: যদি সরকার স্থানীয় বাজারে দাম সমন্বয় করে, তাহলে শিল্প ও পরিবহন খাতের উৎপাদন ব্যয় কমবে। এতে সামগ্রিক উৎপাদনশীলতা বাড়বে।
- মুদ্রাস্ফীতির ওপর ইতিবাচক প্রভাব: জ্বালানির দাম কমলে পণ্য পরিবহন ব্যয় হ্রাস পাবে, যা সরাসরি ভোক্তা বাজারেও প্রভাব ফেলতে পারে।
তবে চ্যালেঞ্জও রয়েছে
যদিও বিশ্ববাজারে তেলের দাম কমছে, বাংলাদেশে এর প্রতিফলন সবসময় তত দ্রুত হয় না। এর পেছনে বেশ কিছু কারণ রয়েছে:
- বাংলাদেশের তেল আমদানি চুক্তিগুলো দীর্ঘমেয়াদী হওয়ায় স্বল্পমেয়াদে দামের প্রভাব ততটা পড়তে নাও পারে।
- মুদ্রার বিনিময় হারও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। যদি টাকার মান দুর্বল হয়, তাহলে আমদানি ব্যয় সেভাবে কমবে না।
- সরকারের ট্যাক্স ও শুল্ক নীতির কারণে দাম সমন্বয় বিলম্বিত হতে পারে।
সার্বিকভাবে কী করা উচিত?
বিশ্ববাজারে তেলের দাম কমার সুফল পেতে হলে বাংলাদেশ সরকারের উচিত দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া। আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে স্থানীয় বাজারে তেলের দাম কমানোর উদ্যোগ নিলে জনগণ এবং শিল্প খাত এর উপকার পাবে। পাশাপাশি, আমদানি চুক্তিগুলো আরও স্বল্পমেয়াদী করা গেলে বিশ্ববাজারের পরিবর্তনের প্রতিফলন আরও দ্রুত ঘটানো সম্ভব হবে।
