মঙ্গলবার, ১৭ই জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

রাখাইন ফিরে যেতে রাজি, তবে এখনো রাখাইনে নির্যাতন চলছে

মোহাম্মদ ইউনুছ অভি টেকনাফ (কক্সবাজার)

রাখাইন ফিরে যেতে রাজি

মিয়ানমার রাখাইন রাজ্যে থেকে বিতাড়িত হয়ে বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের ফেরত যাওয়ার বিষয়ে আবারও কক্সবাজারের ক্যাম্পেগুলোতে আলোচনা চলছে। কেননা রাখাইন থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের অধিকাংশ জায়গা আরাকান আর্মির দখলে থাকায়, দেশটির জান্তা সরকার তাদের গ্রামে ফিরিয়ে নিতে পারবে-এমন প্রশ্ন রোহিঙ্গাদের।

কক্সবাজারের আশ্রিত রোহিঙ্গাদের সাথে কথা বলে এমন চিত্র উঠে এসেছে।

২০২৪ সালে রাখাইন রাজ্যে মংডু টাউনশিপের মাংগালা গ্রাম থেকে পালিয়ে এপারে টেকনাফ সীমান্তে দমদমিয়া ক্যাম্পে পরিবার নিয়ে আশ্রয় নেয় রোহিঙ্গা নুর মোহাম্মদ (৫০)। মিয়ানমারে ফিরে যাওয়ার পরিবেশের বিষয়ে জানতে চাইলে জবাবে বলেছেন, ‘রোহিঙ্গাদের ভিটেমাটি রাখাইন রাজ্যে আরাকান আর্মির দখলে। সেখানে আমাদের নিয়ে কোথায় রাখবে, এটিও স্পষ্ট করেনি দেশটির জান্তা সরকার। সেদেশে (মিয়ানারে) কোথায় নেবে আমাদের, এ ঠিকানা যদি না পায় আমরা কেমন করে ফিরে যাব?
তিনি আরো বলেন, ‘বাংলাদেশ সরকারকে মিয়ানমার ১ লাখ ৮০ হাজার রোহিঙ্গা নিয়ে যাওয়ার বিষয়টি তাদের (জান্তা সরকার) এর নতুন কৌশল কিনা সেটি চিন্তা করা দরকার। কেননা সেময় তাদের দখলে থাকা রাখাইন থেকে আমাদের রোহিঙ্গাদের) বিতাড়িত করেছিল। এখনো সেখানে (রাখাইনে) আরকান আর্মির সাথে জান্তা সরকারের যুদ্ধ চলছে। এমন পরিস্থিতির মধ্য কিভাবে আমাদের তাঁরা (জান্তা) সেখানে নিয়ে যাবেন।’

রোহিঙ্গা ক্যাম্পর বসবাসকারী আজিজুল হক বলেন, ‘রাখাইনে আরকান আর্মির রাজত্ব চলছে। সেখানে কিভাবে ফিরব। আমাদের কোথায় নিয়ে যাওয়া হবে সেটা আগে পরিষ্কার করতে হবে। তাছাড়া ফিরে যাওয়ার বিষয়ে আমাদের কিছু শর্তও আছে। তার মধ্য, নিরাপত্তা, নাগরিকত, ভিটেমাটি ও স্বাধীনভাবে চলাফেরা সুযোগ করে দিতে হবে।”

আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটসের (এআরএসপিএইচ) সভাপতি মোহাম্মদ জুবায়ের বলেন, ‘আট বছরের মধ্য মিয়ানমার জান্তা সরকার শুধু মাত্র ১ লাখ ৮০ হাজার রোহিঙ্গা তথ্য যাচাই-বাচাই শেষ করে নিয়ে যাওয়ার কথা বলছে, এটি আসলে চিন্তার বিষয়। এত দিন পর কেন তাঁরা ছোট একটি দল নিয়ে যাচ্ছে এটার আমরা পরিস্কার না। এখানে অনেক শংসয় রয়েছে।’
বর্তমান নতুন পুরনো আর এদেশে এসে জন্মহার মিয়ে মোট ১৪ লাখের মতো রোহিঙ্গা রয়েছে বাংলাদেশে আরো কম-বেশি হতে পারে জানিয়ে এই রোহিঙ্গা বলেন, ‘এভাবে নিয়ে গেলে ৫২ বছরের বেশি সময় লাগবে বাংলাদেশ সকল রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন করতে। তাছাড়া আমাদের কোথায় নিয়ে রাখা হবে, বিয়টি কেউ পরিস্কার করেনি।’

আরও পড়ুন  বৈষম্যমূলক আচরণ করে সরকার নিরপেক্ষতা হারিয়েছে’

এখনো রাখাইনে নির্যাতন!

বাংলাদেশে আশ্রিত হওয়ার পরও মিয়ানমারে এখনো চার লাখের বেশি রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর বসতির খবর পাওয়া গেছে। এর মধ্য আরাকান আর্মির দখলে থাকা রাখাইন রাজ্যের মধ্য দুই লাখের বেশি রোহিঙ্গার বসতি রয়েছে। সেখানে থাকা রোহিঙ্গাদের আরাকান আর্মি উপর নির্যাতন এবং হুমকি দমকি দিচ্ছে বলে জানিয়েছে সেখানে থাকা রোহিঙ্গারা।

উখিয়ার লম্বাশিয়া ক্যাম্পের বসবাসকারী মোহাম্মদ ইয়াছিন বলেন, ‘রাখাইনে থাকা রোহিঙ্গাদের উপর নির্যাতন চালিয়ে হুমকি-দমকি দিচ্ছে আরাকান আর্মি। সেদেশে থাকা আমার দুই স্বজন এখনো রয়েছে। তাঁরার মংডু টাউনশিপের রয়েছে। গতকাল তাদের সাথে ফোনে কথা হয়েছে। তারা বলছে, ‘আরাকান আর্মি লোকজনকে কোথাও চলাফেলা করতে দিচ্ছিনা। তারা (আরাকান আর্মি) হঠাৎ করে মাইকিং করে ঘর থেকে সবাইকে বের হতে নির্দেশ দেন। তারপর তারা ঘরে ঢুকে তল্লাশি চালায়। কোন অভিযোগ ছাড়াই এ ধরনের কর্মকান্ডা চালাচ্ছে। ফলে অনেকে এপারে (বাংলাদেশে) পালিয়ে আসার চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে।’

ইউএনএইচসিআর-এর তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে ভাসানচরে ৩৬ হাজার ৩৭৬ জনসহ কক্সবাজারের ৩৩ টি ক্যাম্পে ১০ লাখ ৬ হাজার ৫৭৪ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়েছে বাংলাদেশ। দফায় দফায় আলোচনা এবং প্রতিশ্রæতির পরও গত আট বছরে একজন রোহিঙ্গাকে ফেরত নেয়নি মিয়ানমার। এরই মধ্যে আবার নতুন করে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ অব্যাহত রয়েছে

WhatsApp
Facebook
Twitter
LinkedIn
Email
Telegram