সোমবার, ১৬ই জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

চার দিনের চীন সফরে ঢাকা ছাড়লেন প্রধান উপদেষ্টা

অনলাইন ডেস্ক

চার দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে চীনের উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস আজ বুধবার বেলা ১টায় চায়না সাউদার্ন এয়ারলাইনসের একটি বিশেষ ফ্লাইটে চীনের উদ্দেশে রওনা হন। বাংলাদেশ সরকারের প্রধান উপদেষ্টার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজ থেকে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

প্রধান উপদেষ্টার চীন সফরের বিষয়ে গতকাল মঙ্গলবার তাঁর প্রেসসচিব শফিকুল আলম এক সংবাদ সম্মেলনে জানান, প্রধান উপদেষ্টার চীন সফরের মূল ফোকাস হচ্ছে আগামী শুক্রবার দেশটির প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের সঙ্গে তাঁর বৈঠক। এ ছাড়া চীনা বিনিয়োগকারী, পণ্য প্রস্তুতকারী, জ্বালানি কোম্পানিসহ দেশটির বড় বড় শিল্পপ্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কথা বলা এর মধ্যে রয়েছে।

প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, প্রধান উপদেষ্টার অর্থনৈতিক কূটনীতির মূল কাজ হচ্ছে বাংলাদেশকে পুরো বিশ্বের কাছে তুলে ধরা; যাতে বাংলাদেশ এ অঞ্চলের একটি বড় ম্যানুফ্যাকচারিং হাব (পণ্য প্রস্তুতের কেন্দ্র) হয়। সে জন্য যত ধরনের নীতি, সংস্কার দরকার, তা নেওয়া হচ্ছে।

প্রধান উপদেষ্টার চীন সফরের কারণে ভারতের সঙ্গে দূরত্ব বাড়তে পারে কি না, এমন প্রশ্নে প্রেস সচিব বলেন, ‘ভারত ও চীন আমাদের বন্ধু। আমাদের সঙ্গে ভারতের খুবই সুসম্পর্ক আছে। তাদের সঙ্গে বাণিজ্য বাড়ছে। প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, তাদের সঙ্গে আরও ভালো সম্পর্ক করতে চান।’

এর আগে, গত ১৬ মার্চ প্রধান উপদেষ্টার চীন সফরের সময়সূচির বিষয়ে শফিকুল আলম বলেন, ‘এই সফরের সময় চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের সঙ্গে বেইজিংয়ে ২৮ মার্চ অধ্যাপক ইউনূসের দ্বিপক্ষীয় বৈঠক হবে। সেখানে দু’দেশের দ্বিপক্ষীয় সকল বিষয় নিয়ে আলাপ হবে।’ তিনি বলেন, ‘অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস গত ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব গ্রহণের পর এটি হবে তাঁর প্রথম দ্বিপক্ষীয় সফর।’

প্রেস সচিব বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকার বাংলাদেশকে একটা বৈশ্বিক ম্যানুফ্যাকচারিং হাব (উৎপাদন কেন্দ্র) হিসেবে গড়ে তুলতে চায়। সে লক্ষ্যে প্রধান উপদেষ্টার সফরে চীনের কারখানাসমূহকে কীভাবে বাংলাদেশে স্থানান্তর করা যায়, সে বিষয়টি আলোচনায় সর্বোচ্চ গুরুত্ব পাবে।’

আরও পড়ুন  বৈষম্য বিরোধী শিক্ষার্থীদের উপর হামলা মামলায় রাজবাড়ী জেলা আওয়ামী লীগের উপ-দপ্তর সম্পাদক গ্রেপ্তার

অধ্যাপক ইউনূসের সফরসূচির বিষয়ে শফিকুল আলম বলেন, ‘২৬ মার্চ চীনে পৌঁছাবেন প্রধান উপদেষ্টা। এরপর ২৭ তারিখে তিনি চীনের হাইনান প্রদেশে অনুষ্ঠেয় বোয়াও ফোরাম ফর এশিয়া (বিএফএ) সম্মেলনে বক্তব্য দেবেন।’

প্রেস সচিব বলেন, ‘বিএফএকে বলা হয়-প্রাচ্যের দাভোস। এই সম্মেলনে এশিয়ার শীর্ষস্থানীয় নেতৃবৃন্দ এবং বড় বড় প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহীরা যোগ দেবেন। আমরা আশা করছি, বিএফএ সম্মেলনের সাইডলাইনে চীনসহ অন্যান্য দেশের বড় বড় প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহীদের সঙ্গে বৈঠক হবে প্রধান উপদেষ্টার।’

সফরকালে অধ্যাপক ইউনূস পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে বক্তৃতা করবেন এবং এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তাকে অনারারি ডক্টরেট ডিগ্রি দেয়া হবে। এছাড়া তিনি চীনের হাইটেক পার্ক পরিদর্শন করবেন বলে জানান প্রেস সচিব।

শীর্ষস্থানীয় কোম্পানির প্রধান নির্বাহীদের সঙ্গে বৈঠকের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বাংলাদেশকে ম্যানুফ্যাকচারিং হাব হিসেবে গড়ে তোলার বিষয়ে তাদের সঙ্গে আলোচনা হবে। তিনি বলেন, চীনের সঙ্গে সম্পর্কটা নতুন উচ্চতায় নিয়ে যেতে চান অধ্যাপক ইউনূস।

শফিকুল আলম জানান, বৈঠকে চীনের রাষ্ট্রদূত বলেছেন যে, বাংলাদেশের সঙ্গে চীনের কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তিতে বাংলাদেশের সরকার প্রধানের জন্য এই সফরটি হবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

প্রেস সচিব বলেন, এই সফরে অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে মূল ফোকাস থাকবে চীনের কোম্পানিগুলো যেন তাদের কারখানা বাংলাদেশে স্থানান্তর করে। তিনি বলেন, গত বছর জাতিসংঘ সম্মেলনের সাইডলাইনে অনুষ্ঠিত চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার বৈঠকে অধ্যাপক ইউনূস চীনের নবায়নযোগ্য জ্বালানি কোম্পানিকে বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়েছিলেন। তিনি জানান, প্রধান উপদেষ্টার আহ্বানে সাড়া দিয়ে চীনের দু’টি কোম্পানি ইতিমধ্যে বাংলাদেশে অফিস স্থাপন এবং সোলার এনার্জিতে বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

শফিকুল আলম বলেন, ‘চীনের সোলার কোম্পানি ট্রেড প্রোটেকশনের কারণে অনেক ক্ষেত্রে তাদের বিনিয়োগে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। কিন্তু বাংলাদেশে তারা কোন বাধার সম্মুখীন হবেন না।’

তিনি জানান, চট্টগ্রাম বন্দরের সক্ষমতা কত দ্রুত বাড়ানো যায়-সে বিষয়টিও আলোচনায় স্থান পাবে। তিনি আরও জানান, বৈঠকে চীনের রাষ্ট্রদূত বলেছেন, ৫ আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানের পরে অন্য যেকোনো দেশের তুলনায় চীনের কোম্পানিগুলো সর্বোচ্চ বিনিয়োগ করেছে।

আরও পড়ুন  ১ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস শুরু

প্রেস সচিব বলেন, ‘আশা করছি এই সফরের পর আরও চীনা কোম্পানি বাংলাদেশে আসবে।’ চীনের হাসপাতাল চেইন যেন বাংলাদেশে যৌথ বিনিয়োগ করে-সে বিষয়েও আলোচনা হবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।

WhatsApp
Facebook
Twitter
LinkedIn
Email
Telegram