| ২৫ জুন ২০২৫
শিরোনাম:

সাড়ে ছয় হাজার ফুট উঁচুতে এক গ্রামে

সাড়ে ছয় হাজার ফুট উঁচুতে এক গ্রামে

সাড়ে ছয় হাজার ফুট উঁচুতে এক গ্রামে

‘আমরা আজ ২ হাজার ২০ মিটার ওপরের একটা গ্রামে যাব। পায়ে হেঁটে!’

কুমার থাপার কথা শুনে আমার মুখ শুকিয়ে গেল। আমি মোটামুটি অলস ও নন-অ্যাডভেঞ্চারাস প্রকৃতির পর্যটক। সমুদ্র দেখতে গিয়ে সাধারণত সমুদ্রে নামি না, ইজিচেয়ারে শুয়ে বই পড়ি আর সমুদ্রের এলোমেলো বাতাস উপভোগ করি। বেড়াতে গিয়ে রাফটিং, বাঞ্জি জাম্পিং বা প্যারাগ্লাইডিং জাতীয় কর্মকাণ্ডে আমার বিন্দুমাত্র উৎসাহ নেই। তেমনি পাহাড় দেখতে গিয়ে পাহাড়েই উঠতে হবে, এমনটাও কখনো ভাবিনি। মিন মিন করে বলতে চেষ্টা করলাম, ‘মানে হাঁটা ছাড়া আর কোনো পথ নাই?’

শুনলাম ‘কম হাঁটা’র একটি বিকল্প পথ আছে। কিন্তু সে পথে উঠলে আবার বিকেল পাঁচটার মধ্যেই ফিরতে হবে, তাহলে গ্রামে সময় কাটানোর মতো সময় পাওয়া যাবে অল্প। তাই আমার ছেলেমেয়েরা সেই বিকল্প পথের আইডিয়া বাদ দিয়েছে! তারা ‘বেশি ঘুরপথে’ই উঠতে চায়!

পোখারা থেকে ঘোর-প্যাঁচ পাহাড়ি রাস্তা ধরে খাড়া ওপরে উঠছিল আমাদের জিপ। সেই রাস্তার এক ধারে ঘন সবুজ পাহাড়, অন্য ধারে হাজার হাজার ফুট নিচে ফেলে আসা মোহময় ফেওয়া হ্রদ। আমাদের ডান পাশ ঘেঁষে বয়ে চলেছে খরস্রোতা মাদি নদী। আরেকটু ওপরে উঠে বাঁয়ে পড়ল সুন্দর এক জলপ্রপাত। ওটা পেরিয়েই অন্নপূর্ণা রেঞ্জের প্রবেশপথ, পর্যটকদের এখানে পাসপোর্ট ও পারমিট দেখাতে হয়। এখানে চেকিং শেষে আরও খানিকটা পথ গেলে গাড়ি চলাচলের রাস্তা শেষ। একেই বলে ‘রোড টু দ্য এন্ড’। এবার পা দুটোই ভরসা।

যেখানে আমরা থেমেছি, সেখান থেকেই অন্নপূর্ণা বেজক্যাম্পের অভিযাত্রীরা যাত্রা শুরু করবেন ডান দিকের ট্র্যাক ধরে। আর ঘানদ্রুক গ্রামে যেতে উঠতে হবে সোজা পাহাড় বেয়ে ওপরে। কখনো কখনো অভিযাত্রীরাও গ্রামটা দেখে যান কৌতূহলের বশে। কুমার থাপা উৎসাহ দিল, ‘আরে তুমি পারবে! এটা কোনো ব্যাপারই না। শুরু করলেই শেষ।’ ঘণ্টি বাজিয়ে ঘোড়ার পাল পাশ কাটিয়ে গেল টগবগ করে

গাড়ি নিচে রেখে অবশেষে আমাদের যাত্রা শুরু হলো। পাথুরে পাহাড়ি পথ। দুই ধারে ঘন সবুজ গাছপালা, নানা জাতের ফার্ন, মাঝেমধ্যে নাম না জানা পাহাড়ি অর্কিড আর নানা রঙের ফুল। ফুলের এত তীব্র রং আগে দেখিনি। পথ কোথাও উঠে গেছে খাড়া, কোথাও আবার কিছুটা সমতল। কখনো বড় কোনো গাছের ছায়ায় বসে বিশ্রাম নিতে হচ্ছে, পেছনের ব্যাগ থেকে পানির বোতল নিয়ে খাচ্ছি ঢকঢক করে। মৃদু হিমেল হাওয়া শরীর–মন জুড়াচ্ছে। গত রাতে প্রচুর বৃষ্টি হয়েছে। এ জন্য চারদিকে এমন ‘অসহ্য সবুজ’। সর সর করে দুলতে দুলতে যেন গান গাইছে পাহাড়ি ফার্ন। কান পাতলে অনেক নিচ থেকে ভেসে আসে মাদি নদীর কুল কুল ধ্বনি। চারপাশে বৃষ্টিভেজা সোঁদা গন্ধ। জীবনানন্দের কথায় বলতে গেলে, ‘চারিদিকে বড়ো বড়ো আকাশ ও গাছের শরীরে, সময় এসেছে তার নীড়ে’।

সত্যি, পাহাড়ের বুকে আকাশটাকে এত বড় দেখায় কেন? হঠাৎ কানে এল টুং টুং ঘন্টির শব্দ। কী ওটা? কুমার থাপা বলল, ‘ঘোড়ার দল নিয়ে চলেছে কেউ। এখানকার কেউ কেউ ফলপাকুড়, বাঁধাকপি, গম বা ভুট্টা, দুধ বিক্রি করতে নিয়ে যায় নিচে লোকালয়ে, ঘোড়ার পিঠে বেঁধে।’ ঘোড়াদের পথ ছেড়ে দিতে হলো। ঘণ্টি বাজিয়ে ঘোড়ার পাল পাশ কাটিয়ে গেল টগবগ করে। আরও বেশ খানিকটা যেতে পথে পড়ল বিশাল এক পামগাছ। থরে থরে ধরে আছে টসটসে লালচে প্লাম। দেখেই তৎপর কুমার থাপা আর আমাদের গাড়িচালক অনিল বিশ্বকর্মা। একটা লাঠি জোগাড় করে মহা উৎসাহে পাড়তে লাগল প্লাম, আর আমরা শিশুর মতো আনন্দে তা কুড়িয়ে বা ক্যাচ ধরে নিতে থাকলাম। মুখে দিতেই অবিস্মরণীয় স্বাদ। এতক্ষণ পাহাড় বেয়ে পরিশ্রান্ত হয়ে পড়েছিলাম, পায়ের পেশি টনটন করছিল, ঘামে ভিজে গেছে জামা। এখন পাহাড়ি সুস্বাদু প্লাম খেয়ে যেন নবশক্তি ফিরে পেলাম। আসলে এই ফলে আছে প্রচুর পটাশিয়াম আর জলীয় অংশ। রেডি গ্লুকোজও মিলল এ থেকে। ফলে নতুন উদ্যমে আবার হাঁটা শুরু করলাম চড়াই-উতরাই পেরিয়ে। কিন্তু পথ যে ফুরায় না। আর কত? শেষ পর্যন্ত পাহাড়ি পথের চূড়ায় গিয়ে দূরে দেখা মেলে ছোট ছোট পাথরের বাড়ি। ওই তো! পেয়ে গেছি ঘানদ্রুক গ্রাম। হাঁটতে হলো আরও বেশ খানিকটা পথ।

হিমালয়ের কোলের ছোট্ট প্রাচীন গ্রাম ঘানদ্রুকছবি: লেখকের সৌজন্যে
গ্রামের নাম ঘানদ্রুক
ঘানদ্রুক গ্রাম সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় সাড়ে ৬ হাজার ফুট ওপরে। হিমালয়ের কোলের ছোট্ট প্রাচীন গ্রামটি বিশ্বের অন্যতম এক উচ্চ জনবসতি। ৪০০ বছর ধরে গুরুং সম্প্রদায় এই গ্রামের অধিবাসী। গুরুংরা যোদ্ধা জাতি। অসম সাহস আর শৌর্যের জন্য সেনাবাহিনীতে তাদের কদর ভিন্ন। এই গ্রামেরও অনেকে আছেন সেনাবাহিনীসহ বিভিন্ন প্রতিরক্ষা বাহিনীতে।

গ্রামে সারি সারি পাথর আর কাদামাটির তৈরি ধূসর বাড়ি। বাড়িগুলোর মধ্য দিয়ে সংকীর্ণ পাথুরে গলি। কোথাও এক চিলতে জমিতে আলুর ফলন হয়েছে। ভুট্টা, বাঁধাকপিও। ভুট্টা জাঁতাকলে পিষে করা হয় ছাতু। আর বাঁধাকপি আলুর তরকারি। এই হলো খাবার। খেতের শর্ষে থেকে তৈরি হয় তেল। আর পাথর থেকে আসে হিমালয়ান রক সল্ট। ব্যস, আর কী লাগে? দিব্যি পেট চলে। শুনে অবাক হই—প্রোটিন? প্রোটিন খায় না বুঝি তারা? কুমার থাপা গোয়ালঘর দেখায়, ওই যে বড় বড় মহিষ। দুধ হয় প্রচুর। আর মহিষের দুধের ঘন দই। যা খায়, নিজেরাই ফলায় বা তৈরি করে। এত ওপর থেকে নিচে গিয়ে কিছু কেনাকাটা করার সুযোগ নেই। টাকাও নেই। কী সহজ-সরল জীবন। আর এই খেয়ে এদের এত স্ট্যামিনা! যে পথ আমরা উঠে এলাম দুই ঘণ্টায়, তা নাকি এদের নিত্য ২৫ মিনিটের ওঠা-নামা!

ঘানদ্রুক গ্রামে সারি সারি পাথর আর কাদামাটির তৈরি ধূসর বাড়ি
ঘানদ্রুক গ্রামে সারি সারি পাথর আর কাদামাটির তৈরি ধূসর বাড়িছবি: লেখকের সৌজন্যে
সুন্দর গ্রামটা ঘুরে ঘুরে দেখি। এক্কেবারে চোখের নাগালে এসে ধরা দেয় অন্নপূর্ণাসহ বিশাল গম্ভীর হিমালয়। আকাশটাও যেন কত কাছে। দূরে দূরে পাহাড়ের কোলে আরও ছোট ছোট জনবসতি দেখা যায়। আর অনেক অনেক নিচে ফেলে এসেছি মাদি নদী, যার ধার থেকে আমরা এই যাত্রা শুরু করেছিলাম। সহাস্যে আমাদের অভ্যর্থনা জানায় গ্রামবাসী। কোনো কোনো বাড়ি পর্যটকদের জন্য গেস্টহাউস করা হয়েছে। অ্যাডভেঞ্চারাস পর্যটকেরা এই সুউচ্চ গাঁয়ে এসে কয়েক দিন পাহাড়ের কোলে কাটিয়ে যান। থাকতে হবে এই পাথুরে ঘরে, জোঁক আর সাপের ভয় তো আছেই। আর রেডি খাবার মিলবে না, পাহাড়িদের মতোই স্থানীয় উপাদান সংগ্রহ করে রান্না করে খেতে হবে।

সূর্য পশ্চিমে গড়ালে এবার নামবার পালা। কুমার থাপা রসিকতা করে বলল, ‘এই তো বেশ কত ওপরে উঠে গেছ! দুদিন এখানে থাকো, ওঠানামা করো এদের মতো, তাহলে এভারেস্টসুদ্ধ জয় করে ফেলবে!’

শুনে কপট রাগ দেখাই, ‘হুম বলছে তোমাকে!’

বিকেলের ম্লান আলোয় আমরা এবার নামতে শুরু করলাম। নামতে নামতে ৭২ বছর বয়সী টেক বাহাদুরের সঙ্গে দেখা। পিঠে বাঁধা ঝুড়িতে জমিতে ফলানো ব্রকলি নিয়ে লোকালয়ে বিক্রি করতে চলেছে লোকটা। বিক্রি করে যে পয়সা পায়, তা মদিরা খেয়েই উড়িয়ে দেন, বলল কুমার থাপা। ছেলেমেয়ে আছে বটে, তবে তাঁরা তাঁর খোঁজ রাখেন না তেমন। এই বুড়ো বয়সে তাই তাঁকে রোজ পাহাড় বেয়ে নামতে আর উঠতে হয়। কিন্তু বৃদ্ধ লোকটার হাসিমুখ দেখে মনে হলো না এ নিয়ে তাঁর কোনো দুঃখ আছে।

আমাদের দলের মনোবিদ তাঁর স্বভাবসুলভ প্রশ্ন করলেন, ‘মনে দুঃখ হলে কী করেন?’

শুনে টেক বাহাদুর অবাক, ‘দুঃখ? দুঃখ কেন? না না, কোনো দুঃখ-কষ্ট নাই মনে।’

শুনে আমরা আরও অবাক। সে কী! কীভাবে?

ঘানদ্রুক গ্রামের এক নারী
ঘানদ্রুক গ্রামের এক নারীছবি: লেখকের সৌজন্যে
বুড়ো ফোকলা দাঁতে হাসেন, ‘শোন, কারও কাছে কিছু চাওয়ার নেই জীবনে। আর চাওয়া না থাকলে কোনো দুঃখও নেই! সহজ।’

শেষ বিকেলের আলোয় টেক বাহাদুরের কথা ভারী অদ্ভুত লাগে। সুখী হওয়ার এই জীবনদর্শন কী আশ্চর্য সরল! মনে পড়ে, দুদিন আগে বৌদ্ধনাথ প্যাগোডার সামনে থাংকা চিত্রকর দিক্সেন বলছিলেন, ‘“ভালো” আর “মন্দ”র নিখুঁত ভারসাম্যই হ্যাপিনেস বা সুখের রহস্য।’

এতক্ষণে সুউচ্চ হিমালয়ের পেছনে সূর্য ডুবছে। মাদি নদীর জল যেন নেউল ধূসর, জলপাই অরণ্যের ওই পারে পাহাড়ের নীলিমা। এই আশ্চর্য প্রকৃতির সাম্রাজ্য ফেলে ফিরে চলেছি তাহলে। মনে পড়ে, জীবনানন্দ বলেছেন, ‘পৃথিবীর পথে গিয়ে আর কাজ নেই!’

টেক বাহাদুর শেষ পর্যন্ত সঙ্গে সঙ্গে এলেন। হাসিমুখে বিদায় জানালেন।

বললাম, ‘দেখা হবে।’

শুনে তাঁর হাসি আর থামে না, ‘এই এক জীবনে কতজনের সঙ্গে দেখা হলো, কতজনকে বিদায় দিলাম। তারা বলল আবার দেখা হবে। কই, তারা তো আর ফিরে এল না! আচ্ছা, এত এত মানুষ, তারা কোথায় থাকে? কোথায় চলে যায়?’

এই হিমালয়ের বাইরে যে এক বিশাল পৃথিবীও আছে, টেক বাহাদুর তা কল্পনাই করতে পারেন না। আর আমরাই যে পৃথিবীর পথে পথে পদচিহ্ন ফেলে যাই, আমাদের গন্তব্যই কি আমরা জানি?

ওবায়দুল কাদেরের আমলে দুর্নীতিতে ছেয়ে গিয়েছিল সড়ক ও সেতু মন্ত্রণালয়, ফাঁস হলো কমিশনের খেলা

সাড়ে ছয় হাজার ফুট উঁচুতে এক গ্রামে

আওয়ামী লীগ সরকারের টানা সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে ওবায়দুল কাদের ছিলেন সবচেয়ে ক্ষমতাধর মন্ত্রীদের একজন। দীর্ঘ সাড়ে ১২ বছর তিনি সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে ছিলেন। নিজের মুখে বারবার দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর বক্তব্য দিলেও বাস্তবে তার নেতৃত্বে মন্ত্রণালয়টি পরিণত হয়েছিল একটি শক্তিশালী কমিশন সিন্ডিকেটে।

অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, ওবায়দুল কাদের ঘুষ নয়, কমিশনের মাধ্যমে দুর্নীতির পথ তৈরি করেছিলেন। সড়ক ও সেতু বিভাগের যেকোনো কাজ পেতে হলে ঠিকাদারদের ২০ শতাংশ কমিশন দিতে হতো। এ কমিশন প্রকল্প বাজেটের মধ্যেই যোগ করা হতো, যাতে তা আইনগতভাবে ধরা না পড়ে। এমনকি ছোট কাজেও কমিশন বাধ্যতামূলক ছিল।

সড়ক বিভাগে ১২ বছরে প্রায় এক লাখ কোটি টাকার বেশি লুটপাটের অভিযোগ উঠেছে। সওজ বা সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের দেওয়া তথ্যমতে, মন্ত্রণালয় থেকে বরাদ্দ পাওয়া ১ লাখ ৬৯ হাজার কোটি টাকার মধ্যে ১ লাখ ২৭ হাজার কোটি টাকা খরচ হয়েছে নির্মাণকাজে। এর ৭২ শতাংশ কাজ পেয়েছে মাত্র ১৫টি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান, যারা কাদেরের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত এবং নিয়মিত কমিশন দিয়ে আসছিল।

বিশ্বব্যাংকের তথ্য বলছে, বাংলাদেশে সড়ক নির্মাণ খাতে প্রতি কিলোমিটার ব্যয় ভারত ও ইউরোপের তুলনায় অনেক বেশি। মূলত উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে প্রকল্প প্রস্তাবে ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ অতিরিক্ত ব্যয় দেখানো হতো, যার বড় অংশ যেত কমিশন হিসেবে।

সরকারি ক্রয় আইন অনুযায়ী, প্রকল্প অনুমোদন ও কার্যাদেশ দেওয়ার ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা থাকার কথা থাকলেও, বাস্তবে দেখা যায় কমিশন না দিলে ঠিকাদারদের কালো তালিকাভুক্ত করা হতো। শুধু ২০২৪ সাল পর্যন্ত ৪৪টি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কালো তালিকাভুক্ত করা হয়েছে কমিশনের টাকা না দেওয়ার অভিযোগে।

মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রম ছিল এমনভাবে সাজানো, যাতে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত প্রতিটি ধাপে অর্থ লেনদেন ও নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হয়। ডিপিপি প্রস্তুতের সময়েই ঠিক করে রাখা হতো কে কাজ পাবে, কোন খাতে কত টাকা যাবে এবং কত কমিশন বরাদ্দ থাকবে। প্রকল্প অনুমোদনের ক্ষেত্রে পরিকল্পনা কমিশনেও ঘুষ দিতে হতো বলে অভিযোগ রয়েছে।

ওবায়দুল কাদের, তার স্ত্রী, ভাই ও আত্মীয়দের নামে অনেক প্রতিষ্ঠান কার্যাদেশ পেয়েছে, যার মাধ্যমে তিনি ও তার পরিবার উপকৃত হয়েছে বলে একাধিক সূত্রে জানা যায়। ক্ষমতাসীন দলের বেশ কয়েকজন প্রভাবশালী নেতাও এসব প্রতিষ্ঠানের পেছনে কাজ করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

কেবল অর্থ নয়, প্রকল্পের পরিকল্পনা, বাস্তবায়ন এবং অনুমোদনের প্রতিটি ধাপে দুর্নীতির বিস্তৃতি ছিল ভয়াবহ। কখনো হাওরের জমি অধিগ্রহণ করে সড়ক বানানো হয়েছে, যার ব্যবহার নেই বললেই চলে। কোথাও আবার পরিবেশগত ছাড়পত্র পেতে ঘুষ দিতে হয়েছে।

সবমিলিয়ে অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, ওবায়দুল কাদেরের মন্ত্রণালয় ছিল কমিশন নির্ভর এক দুর্নীতির কেন্দ্রবিন্দু। যেখানে যোগ্যতা নয়, কমিশনই ছিল কাজ পাওয়ার প্রধান শর্ত।

এইচএসসি পরীক্ষা শুরু ২৬ জুন, পরীক্ষার্থীদের যাতায়াতে ডিএমপির নতুন নির্দেশনা

সাড়ে ছয় হাজার ফুট উঁচুতে এক গ্রামে

২০২৫ সালের উচ্চ মাধ্যমিক সার্টিফিকেট (এইচএসসি) ও সমমানের পরীক্ষা শুরু হচ্ছে আগামী বৃহস্পতিবার, ২৬ জুন সকাল ১০টা থেকে। পরীক্ষাকে সুশৃঙ্খল ও নির্বিঘ্ন করতে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) পরীক্ষার্থীদের যাতায়াত, যান চলাচল ও নিরাপত্তা নিয়ে কিছু গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা দিয়েছে।

 

ডিএমপির এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, এবারের এইচএসসি পরীক্ষা ঢাকার ৮৭টি কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত হবে। যাতে পরীক্ষার্থীরা নির্বিঘ্নে কেন্দ্রে পৌঁছাতে পারেন এবং কোনো রকম যানজট বা বিশৃঙ্খলার সম্মুখীন না হন, সেজন্য জনসাধারণের সহযোগিতা কামনা করা হয়েছে।

 

যানবাহন ব্যবস্থাপনা ও চলাচলের নির্দেশনা:

ব্যক্তিগত গাড়ি নিয়ে কেন্দ্রে আসার ক্ষেত্রে সতর্কতা:

যেসব পরীক্ষার্থী বা অভিভাবক ব্যক্তিগত গাড়িতে কেন্দ্রে আসবেন, তাদেরকে কেন্দ্রের সামনের সড়কে না নেমে, আশেপাশের কম ব্যস্ত সড়কে নেমে হেঁটে কেন্দ্রে আসার অনুরোধ জানানো হয়েছে। একই নিয়ম পরীক্ষার পর ফেরার সময়েও মানতে হবে।

 

কেন্দ্রের আশেপাশে গাড়ি পার্কিং নিষিদ্ধ:

পরীক্ষাকেন্দ্র সংলগ্ন এলাকায় যানবাহন পার্কিং সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ। নির্দেশনা অমান্য করলে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানিয়েছে ডিএমপি।

 

অভিভাবকদের প্রতি অনুরোধ:

অভিভাবকদেরকে কেন্দ্র সংলগ্ন সড়কে দাঁড়িয়ে না থেকে নির্দিষ্ট দূরত্বে অবস্থান করার অনুরোধ জানানো হয়েছে। কারণ এতে যান চলাচলে বিঘ্ন ঘটে, যা সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮ অনুযায়ী শাস্তিযোগ্য অপরাধ।

 

সাধারণ যাত্রীদের জন্য নির্দেশনা:

পরীক্ষা শুরুর এক ঘণ্টা আগে থেকে শেষ হওয়ার এক ঘণ্টা পর পর্যন্ত পরীক্ষাকেন্দ্র এলাকার সড়কগুলো পরীক্ষা ব্যতীত অন্যান্য যাত্রীদের পরিহার করার অনুরোধ জানানো হয়েছে।

ডিএমপির আহ্বান:

ডিএমপি বলছে, “পরীক্ষার্থীদের স্বার্থে আমাদের সকলের সহযোগিতা প্রয়োজন। যান চলাচল স্বাভাবিক রাখা ও পরীক্ষার্থীদের সময়মতো কেন্দ্রে পৌঁছাতে সহায়তা করাটা আমাদের নৈতিক দায়িত্ব।”

দুদকের বিরুদ্ধে ফেসবুকে বিভ্রান্তিকর পোস্ট, অভিযোগে মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ

সাড়ে ছয় হাজার ফুট উঁচুতে এক গ্রামে

জাতীয় নাগরিক পার্টির দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহর একটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম পোস্ট নিয়ে তীব্র আপত্তি জানিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। কমিশনের দাবি—সেই পোস্টে দুদকের মহাপরিচালকসহ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে যে মানহানিকর অভিযোগ তোলা হয়েছে, তা পুরোপুরি ভিত্তিহীন এবং ভুল তথ্যনির্ভর।

আজ মঙ্গলবার (২৪ জুন) দুপুরে এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে দুদক জানায়, তারা বিষয়টি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করেছে এবং স্পষ্টভাবে বলতে চায়—ফেসবুকে করা ওই পোস্টের তথ্য বাস্তবতার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়।

দুদকের ব্যাখ্যা:
প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, সম্প্রতি একটি প্রতারক চক্র দুদক চেয়ারম্যান, মহাপরিচালক বা কর্মকর্তাদের পরিচয় ব্যবহার করে সাধারণ মানুষকে মামলা থেকে অব্যাহতির প্রতিশ্রুতি দিয়ে অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে। এ ধরনের প্রতারণার ঘটনায় দুদক ইতোমধ্যে আইনগত ব্যবস্থা নিয়েছে এবং চক্রের একাধিক সদস্যকে গ্রেফতারও করা হয়েছে।

“হাসনাত আব্দুল্লাহ যাচাই না করেই ফেসবুকে মনগড়া ও বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়িয়েছেন”—বলা হয়েছে বিজ্ঞপ্তিতে।

ভবিষ্যতে সতর্ক থাকার আহ্বান:দুদক জানায়, অতীতেও বিভিন্ন সময় গণমাধ্যমে এ ধরনের প্রতারক চক্র সম্পর্কে সতর্কতা জারি করা হয়েছে। তবুও অনেকে বিভ্রান্ত হয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দুদকের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছেন, যা কমিশনের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করছে।

সাধারণ মানুষকে সতর্ক করে দুদক আরও বলেছে—কোনো ব্যক্তি যদি ফোন, মেসেজ বা ব্যক্তিগতভাবে দুদক কর্মকর্তার পরিচয়ে টাকা দাবি করে, তাহলে সঙ্গে সঙ্গে টোল-ফ্রি হটলাইন ১০৬-এ যোগাযোগ করার আহ্বান জানানো হয়েছে। প্রয়োজনে নিকটস্থ দুদক কার্যালয় বা আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহায়তা নিতে বলা হয়েছে।

×