| ৯ আগস্ট ২০২৫
শিরোনাম:

সাড়ে ছয় হাজার ফুট উঁচুতে এক গ্রামে

সাড়ে ছয় হাজার ফুট উঁচুতে এক গ্রামে

সাড়ে ছয় হাজার ফুট উঁচুতে এক গ্রামে

‘আমরা আজ ২ হাজার ২০ মিটার ওপরের একটা গ্রামে যাব। পায়ে হেঁটে!’

কুমার থাপার কথা শুনে আমার মুখ শুকিয়ে গেল। আমি মোটামুটি অলস ও নন-অ্যাডভেঞ্চারাস প্রকৃতির পর্যটক। সমুদ্র দেখতে গিয়ে সাধারণত সমুদ্রে নামি না, ইজিচেয়ারে শুয়ে বই পড়ি আর সমুদ্রের এলোমেলো বাতাস উপভোগ করি। বেড়াতে গিয়ে রাফটিং, বাঞ্জি জাম্পিং বা প্যারাগ্লাইডিং জাতীয় কর্মকাণ্ডে আমার বিন্দুমাত্র উৎসাহ নেই। তেমনি পাহাড় দেখতে গিয়ে পাহাড়েই উঠতে হবে, এমনটাও কখনো ভাবিনি। মিন মিন করে বলতে চেষ্টা করলাম, ‘মানে হাঁটা ছাড়া আর কোনো পথ নাই?’

শুনলাম ‘কম হাঁটা’র একটি বিকল্প পথ আছে। কিন্তু সে পথে উঠলে আবার বিকেল পাঁচটার মধ্যেই ফিরতে হবে, তাহলে গ্রামে সময় কাটানোর মতো সময় পাওয়া যাবে অল্প। তাই আমার ছেলেমেয়েরা সেই বিকল্প পথের আইডিয়া বাদ দিয়েছে! তারা ‘বেশি ঘুরপথে’ই উঠতে চায়!

পোখারা থেকে ঘোর-প্যাঁচ পাহাড়ি রাস্তা ধরে খাড়া ওপরে উঠছিল আমাদের জিপ। সেই রাস্তার এক ধারে ঘন সবুজ পাহাড়, অন্য ধারে হাজার হাজার ফুট নিচে ফেলে আসা মোহময় ফেওয়া হ্রদ। আমাদের ডান পাশ ঘেঁষে বয়ে চলেছে খরস্রোতা মাদি নদী। আরেকটু ওপরে উঠে বাঁয়ে পড়ল সুন্দর এক জলপ্রপাত। ওটা পেরিয়েই অন্নপূর্ণা রেঞ্জের প্রবেশপথ, পর্যটকদের এখানে পাসপোর্ট ও পারমিট দেখাতে হয়। এখানে চেকিং শেষে আরও খানিকটা পথ গেলে গাড়ি চলাচলের রাস্তা শেষ। একেই বলে ‘রোড টু দ্য এন্ড’। এবার পা দুটোই ভরসা।

যেখানে আমরা থেমেছি, সেখান থেকেই অন্নপূর্ণা বেজক্যাম্পের অভিযাত্রীরা যাত্রা শুরু করবেন ডান দিকের ট্র্যাক ধরে। আর ঘানদ্রুক গ্রামে যেতে উঠতে হবে সোজা পাহাড় বেয়ে ওপরে। কখনো কখনো অভিযাত্রীরাও গ্রামটা দেখে যান কৌতূহলের বশে। কুমার থাপা উৎসাহ দিল, ‘আরে তুমি পারবে! এটা কোনো ব্যাপারই না। শুরু করলেই শেষ।’ ঘণ্টি বাজিয়ে ঘোড়ার পাল পাশ কাটিয়ে গেল টগবগ করে

গাড়ি নিচে রেখে অবশেষে আমাদের যাত্রা শুরু হলো। পাথুরে পাহাড়ি পথ। দুই ধারে ঘন সবুজ গাছপালা, নানা জাতের ফার্ন, মাঝেমধ্যে নাম না জানা পাহাড়ি অর্কিড আর নানা রঙের ফুল। ফুলের এত তীব্র রং আগে দেখিনি। পথ কোথাও উঠে গেছে খাড়া, কোথাও আবার কিছুটা সমতল। কখনো বড় কোনো গাছের ছায়ায় বসে বিশ্রাম নিতে হচ্ছে, পেছনের ব্যাগ থেকে পানির বোতল নিয়ে খাচ্ছি ঢকঢক করে। মৃদু হিমেল হাওয়া শরীর–মন জুড়াচ্ছে। গত রাতে প্রচুর বৃষ্টি হয়েছে। এ জন্য চারদিকে এমন ‘অসহ্য সবুজ’। সর সর করে দুলতে দুলতে যেন গান গাইছে পাহাড়ি ফার্ন। কান পাতলে অনেক নিচ থেকে ভেসে আসে মাদি নদীর কুল কুল ধ্বনি। চারপাশে বৃষ্টিভেজা সোঁদা গন্ধ। জীবনানন্দের কথায় বলতে গেলে, ‘চারিদিকে বড়ো বড়ো আকাশ ও গাছের শরীরে, সময় এসেছে তার নীড়ে’।

সত্যি, পাহাড়ের বুকে আকাশটাকে এত বড় দেখায় কেন? হঠাৎ কানে এল টুং টুং ঘন্টির শব্দ। কী ওটা? কুমার থাপা বলল, ‘ঘোড়ার দল নিয়ে চলেছে কেউ। এখানকার কেউ কেউ ফলপাকুড়, বাঁধাকপি, গম বা ভুট্টা, দুধ বিক্রি করতে নিয়ে যায় নিচে লোকালয়ে, ঘোড়ার পিঠে বেঁধে।’ ঘোড়াদের পথ ছেড়ে দিতে হলো। ঘণ্টি বাজিয়ে ঘোড়ার পাল পাশ কাটিয়ে গেল টগবগ করে। আরও বেশ খানিকটা যেতে পথে পড়ল বিশাল এক পামগাছ। থরে থরে ধরে আছে টসটসে লালচে প্লাম। দেখেই তৎপর কুমার থাপা আর আমাদের গাড়িচালক অনিল বিশ্বকর্মা। একটা লাঠি জোগাড় করে মহা উৎসাহে পাড়তে লাগল প্লাম, আর আমরা শিশুর মতো আনন্দে তা কুড়িয়ে বা ক্যাচ ধরে নিতে থাকলাম। মুখে দিতেই অবিস্মরণীয় স্বাদ। এতক্ষণ পাহাড় বেয়ে পরিশ্রান্ত হয়ে পড়েছিলাম, পায়ের পেশি টনটন করছিল, ঘামে ভিজে গেছে জামা। এখন পাহাড়ি সুস্বাদু প্লাম খেয়ে যেন নবশক্তি ফিরে পেলাম। আসলে এই ফলে আছে প্রচুর পটাশিয়াম আর জলীয় অংশ। রেডি গ্লুকোজও মিলল এ থেকে। ফলে নতুন উদ্যমে আবার হাঁটা শুরু করলাম চড়াই-উতরাই পেরিয়ে। কিন্তু পথ যে ফুরায় না। আর কত? শেষ পর্যন্ত পাহাড়ি পথের চূড়ায় গিয়ে দূরে দেখা মেলে ছোট ছোট পাথরের বাড়ি। ওই তো! পেয়ে গেছি ঘানদ্রুক গ্রাম। হাঁটতে হলো আরও বেশ খানিকটা পথ।

হিমালয়ের কোলের ছোট্ট প্রাচীন গ্রাম ঘানদ্রুকছবি: লেখকের সৌজন্যে
গ্রামের নাম ঘানদ্রুক
ঘানদ্রুক গ্রাম সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় সাড়ে ৬ হাজার ফুট ওপরে। হিমালয়ের কোলের ছোট্ট প্রাচীন গ্রামটি বিশ্বের অন্যতম এক উচ্চ জনবসতি। ৪০০ বছর ধরে গুরুং সম্প্রদায় এই গ্রামের অধিবাসী। গুরুংরা যোদ্ধা জাতি। অসম সাহস আর শৌর্যের জন্য সেনাবাহিনীতে তাদের কদর ভিন্ন। এই গ্রামেরও অনেকে আছেন সেনাবাহিনীসহ বিভিন্ন প্রতিরক্ষা বাহিনীতে।

গ্রামে সারি সারি পাথর আর কাদামাটির তৈরি ধূসর বাড়ি। বাড়িগুলোর মধ্য দিয়ে সংকীর্ণ পাথুরে গলি। কোথাও এক চিলতে জমিতে আলুর ফলন হয়েছে। ভুট্টা, বাঁধাকপিও। ভুট্টা জাঁতাকলে পিষে করা হয় ছাতু। আর বাঁধাকপি আলুর তরকারি। এই হলো খাবার। খেতের শর্ষে থেকে তৈরি হয় তেল। আর পাথর থেকে আসে হিমালয়ান রক সল্ট। ব্যস, আর কী লাগে? দিব্যি পেট চলে। শুনে অবাক হই—প্রোটিন? প্রোটিন খায় না বুঝি তারা? কুমার থাপা গোয়ালঘর দেখায়, ওই যে বড় বড় মহিষ। দুধ হয় প্রচুর। আর মহিষের দুধের ঘন দই। যা খায়, নিজেরাই ফলায় বা তৈরি করে। এত ওপর থেকে নিচে গিয়ে কিছু কেনাকাটা করার সুযোগ নেই। টাকাও নেই। কী সহজ-সরল জীবন। আর এই খেয়ে এদের এত স্ট্যামিনা! যে পথ আমরা উঠে এলাম দুই ঘণ্টায়, তা নাকি এদের নিত্য ২৫ মিনিটের ওঠা-নামা!

ঘানদ্রুক গ্রামে সারি সারি পাথর আর কাদামাটির তৈরি ধূসর বাড়ি
ঘানদ্রুক গ্রামে সারি সারি পাথর আর কাদামাটির তৈরি ধূসর বাড়িছবি: লেখকের সৌজন্যে
সুন্দর গ্রামটা ঘুরে ঘুরে দেখি। এক্কেবারে চোখের নাগালে এসে ধরা দেয় অন্নপূর্ণাসহ বিশাল গম্ভীর হিমালয়। আকাশটাও যেন কত কাছে। দূরে দূরে পাহাড়ের কোলে আরও ছোট ছোট জনবসতি দেখা যায়। আর অনেক অনেক নিচে ফেলে এসেছি মাদি নদী, যার ধার থেকে আমরা এই যাত্রা শুরু করেছিলাম। সহাস্যে আমাদের অভ্যর্থনা জানায় গ্রামবাসী। কোনো কোনো বাড়ি পর্যটকদের জন্য গেস্টহাউস করা হয়েছে। অ্যাডভেঞ্চারাস পর্যটকেরা এই সুউচ্চ গাঁয়ে এসে কয়েক দিন পাহাড়ের কোলে কাটিয়ে যান। থাকতে হবে এই পাথুরে ঘরে, জোঁক আর সাপের ভয় তো আছেই। আর রেডি খাবার মিলবে না, পাহাড়িদের মতোই স্থানীয় উপাদান সংগ্রহ করে রান্না করে খেতে হবে।

সূর্য পশ্চিমে গড়ালে এবার নামবার পালা। কুমার থাপা রসিকতা করে বলল, ‘এই তো বেশ কত ওপরে উঠে গেছ! দুদিন এখানে থাকো, ওঠানামা করো এদের মতো, তাহলে এভারেস্টসুদ্ধ জয় করে ফেলবে!’

শুনে কপট রাগ দেখাই, ‘হুম বলছে তোমাকে!’

বিকেলের ম্লান আলোয় আমরা এবার নামতে শুরু করলাম। নামতে নামতে ৭২ বছর বয়সী টেক বাহাদুরের সঙ্গে দেখা। পিঠে বাঁধা ঝুড়িতে জমিতে ফলানো ব্রকলি নিয়ে লোকালয়ে বিক্রি করতে চলেছে লোকটা। বিক্রি করে যে পয়সা পায়, তা মদিরা খেয়েই উড়িয়ে দেন, বলল কুমার থাপা। ছেলেমেয়ে আছে বটে, তবে তাঁরা তাঁর খোঁজ রাখেন না তেমন। এই বুড়ো বয়সে তাই তাঁকে রোজ পাহাড় বেয়ে নামতে আর উঠতে হয়। কিন্তু বৃদ্ধ লোকটার হাসিমুখ দেখে মনে হলো না এ নিয়ে তাঁর কোনো দুঃখ আছে।

আমাদের দলের মনোবিদ তাঁর স্বভাবসুলভ প্রশ্ন করলেন, ‘মনে দুঃখ হলে কী করেন?’

শুনে টেক বাহাদুর অবাক, ‘দুঃখ? দুঃখ কেন? না না, কোনো দুঃখ-কষ্ট নাই মনে।’

শুনে আমরা আরও অবাক। সে কী! কীভাবে?

ঘানদ্রুক গ্রামের এক নারী
ঘানদ্রুক গ্রামের এক নারীছবি: লেখকের সৌজন্যে
বুড়ো ফোকলা দাঁতে হাসেন, ‘শোন, কারও কাছে কিছু চাওয়ার নেই জীবনে। আর চাওয়া না থাকলে কোনো দুঃখও নেই! সহজ।’

শেষ বিকেলের আলোয় টেক বাহাদুরের কথা ভারী অদ্ভুত লাগে। সুখী হওয়ার এই জীবনদর্শন কী আশ্চর্য সরল! মনে পড়ে, দুদিন আগে বৌদ্ধনাথ প্যাগোডার সামনে থাংকা চিত্রকর দিক্সেন বলছিলেন, ‘“ভালো” আর “মন্দ”র নিখুঁত ভারসাম্যই হ্যাপিনেস বা সুখের রহস্য।’

এতক্ষণে সুউচ্চ হিমালয়ের পেছনে সূর্য ডুবছে। মাদি নদীর জল যেন নেউল ধূসর, জলপাই অরণ্যের ওই পারে পাহাড়ের নীলিমা। এই আশ্চর্য প্রকৃতির সাম্রাজ্য ফেলে ফিরে চলেছি তাহলে। মনে পড়ে, জীবনানন্দ বলেছেন, ‘পৃথিবীর পথে গিয়ে আর কাজ নেই!’

টেক বাহাদুর শেষ পর্যন্ত সঙ্গে সঙ্গে এলেন। হাসিমুখে বিদায় জানালেন।

বললাম, ‘দেখা হবে।’

শুনে তাঁর হাসি আর থামে না, ‘এই এক জীবনে কতজনের সঙ্গে দেখা হলো, কতজনকে বিদায় দিলাম। তারা বলল আবার দেখা হবে। কই, তারা তো আর ফিরে এল না! আচ্ছা, এত এত মানুষ, তারা কোথায় থাকে? কোথায় চলে যায়?’

এই হিমালয়ের বাইরে যে এক বিশাল পৃথিবীও আছে, টেক বাহাদুর তা কল্পনাই করতে পারেন না। আর আমরাই যে পৃথিবীর পথে পথে পদচিহ্ন ফেলে যাই, আমাদের গন্তব্যই কি আমরা জানি?

কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারীতে কৃতি শিক্ষার্থী সংবর্ধনা দিল ইসলামী ছাত্র শিবির

সাড়ে ছয় হাজার ফুট উঁচুতে এক গ্রামে
তোমরা হবে স্বপ্নে রাঙা সূর্যোদয়, লক্ষ আশার শপথ বুকে দীপ্তি ছড়ায় বিশ্বময়” এই প্রতিপাদ্যে কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারীতে এসএসসি ও দাখিল পরীক্ষায় জিপিএ-৫ প্রাপ্ত কৃতি শিক্ষার্থীদের ক‍্যারিয়ার গাইডলাইন এবং সংবর্ধনা প্রদান করা হয়েছে।
শুক্রবার সকালে উপজেলা পরিষদ হলরুমে এই সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করে ছাত্রশিবির ভূরুঙ্গামারী উপজেলা শাখা।
অনুষ্ঠানে কৃতিত্ব অর্জনকারী শিক্ষার্থীদের হাতে ক্রেস্ট, ইসলামি সাহিত্য, সার্টিফিকেট, কলম, পরিবেশ বন্ধু গাছ এবং ছাত্রশিবিরের পরিচিতি উপহার হিসেবে তুলে দেয়া হয়।
উপজেলা সভাপতি আরিফুল ইসলাম এর সভাপতিত্বে ও সেক্রেটারি আল মামুন এর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার দ্বীপ জন মিত্র। প্রধান আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ছাত্র শিবিরের কুড়িগ্রাম জেলা সেক্রেটারি মোবাশ্বের রাশেদ্বীন। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ভূরুঙ্গামারী থানার অফিসার ইনচার্জ আল হেলাল মাহমুদ ও কুড়িগ্রাম -১ আসনের জামায়াত মনোনীত সংসদ সদস্য প্রার্থী অধ্যাপক আনোয়ারুল ইসলাম।
অন‍্যান‍্যদের মধ্যে মিজানুর রহমান, ফেরদৌস হোসেন, আবু হেনা মাসুম, রোকনুজ্জামান ও রাজু আহমেদ প্রমখ বক্তব্য রাখেন।
শিক্ষার্থীদের মধ্যে থেকে অনুভূতি প্রকাশ করে বক্তব্য দেন ভূরুঙ্গামারী সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের বিজ্ঞান বিভাগ থেকে জিপিএ ৫ পাওয়া জান্নাতুন ফেরদৌসী ও জয়মনিরহাট মহিউদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয়ের তানভীর হাসান তামিম।
শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে বিভিন্ন দিক নির্দেশনা মূলক কথা এবং কৃতিত্বের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখার পরামর্শ দেন তারা।
বক্তারা বলেন, মেধা ও নৈতিকতার সমন্বয়ে নিজেকে গড়ে তুলতে হবে। স্বপ্ন দেখতে হবে বড়, আর সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নে চালিয়ে যেতে হবে সর্বোচ্চ চেষ্টা। জ্ঞান-বিজ্ঞানের চর্চা, সময়ের সঠিক ব্যবহার এবং ধর্মীয় মূল্যবোধ লালনের মাধ্যমে একজন শিক্ষার্থী সমাজ ও রাষ্ট্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। দক্ষতা অর্জনের কোন বিকল্প নেই।

যুক্তরাষ্ট্রে জিম্বাবুয়ের রুটিন ভিসা সাময়িক স্থগিত, উদ্বেগে নাগরিকরা

সাড়ে ছয় হাজার ফুট উঁচুতে এক গ্রামে

যুক্তরাষ্ট্র হঠাৎ করেই জিম্বাবুয়ের নাগরিকদের জন্য সব ধরনের নিয়মিত (রুটিন) ভিসা আবেদন সাময়িকভাবে স্থগিত করেছে।

শুক্রবার (৮ আগস্ট) আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের এক বিবৃতির বরাতে এই তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে।

 

বিবৃতিতে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্র জিম্বাবুয়ে সরকারের সঙ্গে কিছু ইস্যুতে উদ্বেগ দূর করার চেষ্টা চালাচ্ছে। সেই আলোচনার অংশ হিসেবে জিম্বাবুয়েতে অবস্থিত মার্কিন দূতাবাস শুক্রবার থেকে রুটিন ভিসা কার্যক্রম স্থগিত রাখবে।

 

দূতাবাস জানিয়েছে, এটি সাময়িক পদক্ষেপ, যার মূল উদ্দেশ্য হলো ভিসার অপব্যবহার ও সময়ের বেশি যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান (Overstay) রোধ করা।

তবে, কূটনৈতিক ও সরকারি কাজে ব্যবহৃত ভিসাগুলো এই নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়বে না।

 

অভিবাসন নীতিতে কড়াকড়ি

আলজাজিরা আরও জানিয়েছে, এটি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের সময় থেকে চলা অভিবাসন নীতিরই একটি অংশ, যেখানে আফ্রিকার একাধিক দেশের উপর কঠোর বিধি-নিষেধ আরোপ করা হয়েছে।

 

চলতি বছরের জুন মাসে যুক্তরাষ্ট্র ১২টি দেশের ওপর ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে, যার মধ্যে ৭টি দেশ আফ্রিকায় অবস্থিত। এছাড়াও আরও ৭টি দেশের ওপর বিধিনিষেধ বাড়ানো হয়, যাদের মধ্যে জিম্বাবুয়ে, মালাউই ও জাম্বিয়া রয়েছে।

 

যুক্তরাষ্ট্রের নির্দেশনা কী?

যুক্তরাষ্ট্র জানিয়েছে, তারা ৩৬টি দেশের কাছে দাবি জানিয়েছে, যাতে তারা—

নিজেদের নাগরিক যাচাই প্রক্রিয়া উন্নত করে

অবৈধভাবে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানরত ব্যক্তিদের ফিরিয়ে আনে

ভিসা ব্যবস্থায় অনিয়ম ও অপব্যবহার রোধে কার্যকর উদ্যোগ নেয়

 

১২ আগস্ট থেকে শুরু ৭২ ঘণ্টার পরিবহন ধর্মঘট, সড়ক পরিবহন আইন সংশোধনসহ ৮ দফা দাবি মালিক-শ্রমিক পরিষদের

সাড়ে ছয় হাজার ফুট উঁচুতে এক গ্রামে

সড়ক পরিবহন আইন সংশোধনসহ ৮ দফা দাবিতে আসছে ৭২ ঘণ্টার পরিবহন ধর্মঘট। আগামী ১২ আগস্ট সকাল ৬টা থেকে ১৫ আগস্ট সকাল ৬টা পর্যন্ত এই ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক-শ্রমিক সমন্বয় পরিষদ।

 

শুক্রবার (৮ আগস্ট) যশোরে বাংলাদেশ পরিবহন সংস্থা শ্রমিক ইউনিয়নের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক জরুরি সভা শেষে এই ঘোষণা দেন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কেন্দ্রীয় মহাসচিব সাইফুল আলম।

 

সভায় বরিশাল, খুলনা বিভাগ ও বৃহত্তর ফরিদপুর অঞ্চলের পরিবহন মালিক-শ্রমিক নেতারা উপস্থিত ছিলেন। তারা অভিযোগ করেন, সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮ একটি কালো আইন, যা মালিক-শ্রমিকদের ওপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করছে।

 

প্রধান ৮টি দাবি:

১. আইনের ৯৮ ও ১০৫ ধারাসহ মালিক-শ্রমিকদের প্রস্তাবিত অন্যান্য ধারা সংশোধন।

২. বাণিজ্যিক মোটরযানের ইকোনমিক লাইফ ৩০ বছর পর্যন্ত বৃদ্ধি।

৩. যানবাহনের ওপর দ্বিগুণ অগ্রিম ট্যাক্স বাতিল করে আগের হার পুনঃস্থাপন।

৪. রিকন্ডিশন বাণিজ্যিক যানবাহনের আমদানির সময়সীমা ৫ বছর থেকে বাড়িয়ে ১২ বছর।

৫. দুর্ঘটনায় জব্দ হওয়া যানবাহন ৭২ ঘণ্টার মধ্যে মালিকের জিম্মায় ফেরত দেওয়ার ব্যবস্থা।

৬. মেয়াদোত্তীর্ণ যানবাহনের জন্য স্ক্র্যাপ নীতিমালা প্রণয়ন।

৭. মহাসড়কে তিন চাকার ও অঅনুমোদিত হালকা যানবাহনের জন্য পৃথক লেন চালু।

৮. ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রদান ও নবায়ন প্রক্রিয়া দ্রুততার সঙ্গে শেষ করা।

 

এছাড়া পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের ১২ দফা দাবিও বাস্তবায়নের দাবি জানানো হয় সভায়।

 

সভায় সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদের খুলনা বিভাগীয় সভাপতি আনিসুর রহমান লিটন। বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সভাপতি আব্দুর রহিম বক্স দুদু, বরিশাল বিভাগের সাধারণ সম্পাদক ইউসুফ আলীসহ অনেকে।

 

পরিবহন ধর্মঘট ঘিরে যাত্রী সাধারণ, মালবাহী পরিবহন, ও চালক-মালিকরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। সংশ্লিষ্টরা দ্রুত সমঝোতার আহ্বান জানিয়েছেন।

×