যে কারনে কোলন ক্যান্সার ঝুঁকিতে যুবকরা
ছবি: সংগৃহীত
২০০৪ থেকে ২০১৬ সালের মধ্যে ২০–২৯ বছর বয়সীদের মধ্যে কোলন ক্যানসারের হার প্রতি বছর গড়ে ৭.৯ শতাংশ করে বেড়েছে। একই সময়ে ৩০–৩৯ বছর বয়সীদের মধ্যে এ হার ছিল ৪.৯ শতাংশ এবং ৪০–৪৯ বছর বয়সীদের মধ্যে ১.৬ শতাংশ। ইউরোপজুড়ে পরিচালিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, তরুণদের মধ্যেই কোলোরেক্টাল ক্যানসার সবচেয়ে দ্রুত বাড়ছে।
৬০ বছরের ঊর্ধ্বে এ রোগের হার কমলেও, ৫০ বছরের নিচের জনগোষ্ঠীর মধ্যে এর বিস্তার উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে। ১৯৯০ সালে বিশ্বে কোলোরেক্টাল ক্যানসারের রোগী ছিলেন প্রায় ৯৪ হাজার ৭০০ জন, যা ২০১৯ সালে বেড়ে দাঁড়ায় ২ লাখ ২৫ হাজার ৭৩৬ জনে।
অতি-প্রক্রিয়াজাত খাবার বড় কারণ
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তরুণদের মধ্যে এ রোগের বৃদ্ধি মূলত জীবনধারা ও খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তনের সঙ্গে সম্পর্কিত। জেনেটিক কারণকে তুলনামূলকভাবে কম দায়ী করা হচ্ছে। বিশেষ করে অতি-প্রক্রিয়াজাত খাবার (ultra-processed foods) এখন কোলোরেক্টাল ক্যানসারের অন্যতম বড় ঝুঁকি হিসেবে চিহ্নিত হচ্ছে।
২০২৫ সালে প্রকাশিত এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, এসব খাবারের মধ্যে রয়েছে—প্যাকেটজাত স্ন্যাকস, রেডি মিলস, চিনিযুক্ত খাবার, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত মাংস ও ফাস্টফুড।
গবেষণায় চমকপ্রদ ফলাফল
ব্রিটিশ মেডিকেল জার্নালে প্রকাশিত এক গবেষণায় ৪৬ হাজারেরও বেশি পুরুষকে ২৪–২৮ বছর ধরে পর্যবেক্ষণ করা হয়। এতে দেখা যায়, যারা সবচেয়ে বেশি অতি-প্রক্রিয়াজাত খাবার খেয়েছেন, তাদের কোলোরেক্টাল ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি অন্যদের তুলনায় ২৯ শতাংশ বেশি।
অবাক করার বিষয় হলো—পুষ্টি ও ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখার পরও একই ফলাফল পাওয়া গেছে। গবেষকরা বলছেন, কীভাবে এসব খাবার ক্যানসার সৃষ্টি করে তা জানতে আরও বিস্তারিত গবেষণা প্রয়োজন।
স্থূলতা ছাড়াও ঝুঁকি
এতদিন অতি-প্রক্রিয়াজাত খাবারকে মূলত স্থূলতার সঙ্গে যুক্ত করা হতো। আর অতিরিক্ত ওজন যে ক্যানসারের বড় ঝুঁকি, তা সুপরিচিত। তবে সাম্প্রতিক গবেষণা বলছে, স্বাভাবিক ওজনের মানুষদের মধ্যেও কোলোরেক্টাল ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ছে।
ভবিষ্যতের সম্ভাব্য হুমকি
যেভাবে একসময় তামাককে ফুসফুসের ক্যানসারের কারণ হিসেবে এবং অ্যালকোহলকে স্তন ও লিভার ক্যানসারের ঝুঁকির উপাদান হিসেবে স্বীকৃতি পেতে দশক লেগেছিল—বিশেষজ্ঞদের ধারণা, আগামী এক দশকের মধ্যেই অতি-প্রক্রিয়াজাত খাবার তরুণদের কোলোরেক্টাল ক্যানসারের প্রধান কারণ হিসেবে স্বীকৃতি পাবে।
যদি ২০ শতকের ক্যানসারের বড় কারণ হয়ে থাকে ধূমপান, তবে ২১ শতকে সেই স্থান দখল করতে পারে অতি-প্রক্রিয়াজাত খাবার। বিজ্ঞান এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে না পৌঁছালেও প্রতিদিনই এর পক্ষে নতুন প্রমাণ যুক্ত হচ্ছে।
আশার খবর ২০২৫ সালের এক গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিত দই খাওয়া কোলন ক্যানসারের ঝুঁকি কমাতে পারে। কোলোরেক্টাল ক্যানসারেরই একটি ধরন হলো কোলন ক্যানসার। তাই বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ— অতি-প্রক্রিয়াজাত খাবার বাদ দিয়ে নিয়মিত দইসহ প্রাকৃতিক ও স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তোলা উচিত।
একসময় ক্যানসারকে বার্ধক্যজনিত রোগ মনে করা হলেও এখন দেখা যাচ্ছে, কিছু ধরনের ক্যানসার ক্রমেই তরুণদের মধ্যেও বাড়ছে। তাই এখনই সচেতনতা ও স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস জরুরি।