গাজায় ২ বছরে প্রতি ঘণ্টায় ১ শিশু নিহত
শরনার্থী শিবিরে দুই ক্ষুদার্ত শিশু, ছবি: সংগৃহীত
বিশ্বনেতাদের নীরবতায় তৃতীয় বছরে পা রাখল গাজায় ইসরাইলি বর্বরতা। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে টানা ২৪ মাস ধরে গাজায় একের পর এক নৃশংস হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরাইল। পুরো জাতিকে নিশ্চিহ্ন করার এই অভিযানে প্রথম ও প্রধান শিকার শিশুরা।
আল-জাজিরার সর্বশেষ পরিসংখ্যানে বলা হয়েছে, গত দুই বছরে গাজায় প্রতি ঘণ্টায় একজন করে শিশুকে হত্যা করেছে ইসরাইলি সেনারা। এই সময়ে অন্তত ২০ হাজার শিশুর প্রাণ গেছে।
বহু টালবাহানার পর গত সপ্তাহে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ‘২০ দফা শান্তি প্রস্তাব’ পেশ করেন। মিসরের শার্ম এল শেখ শহরে যুক্তরাষ্ট্র, মিসর, কাতার ও হামাসের মধ্যস্থতায় হামাস-ইসরাইলের প্রতিনিধিদের মধ্যে চূড়ান্ত পর্যায়ের আলোচনা চলছে।
কাতার জানিয়েছে, সোমবার প্রথম দফার ‘ইতিবাচক’ আলোচনা শেষে মঙ্গলবার দুপুরে দ্বিতীয় দফার বৈঠক শুরু হয়েছে। তবে তাতেও থামেনি ইসরাইলি হামলা। মঙ্গলবারও গাজা সিটিতে বিমান হামলা চালানো হয়েছে।
হামাসের আলোচক দলের ঘনিষ্ঠ দুটি সূত্র এএফপিকে জানিয়েছে, প্রথম দফার আলোচনায় ইতিবাচক অগ্রগতি হয়েছে।
কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মাজেদ মোহাম্মদ আল আনসারি বলেন, “চার ঘণ্টাব্যাপী তীব্র ও সুচিন্তিত আলোচনায় মূল বাধাগুলো চিহ্নিত করার চেষ্টা হয়েছে।” তিনি আরও জানান, আলোচনা অব্যাহত আছে এবং কয়েকটি বিষয়ে চুক্তির প্রয়োজন রয়ে গেছে।
গণহত্যার দুই বছরের পরিসংখ্যান: গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাবে, গত ২৪ মাসে ইসরাইলি হামলায় অন্তত ৬৭ হাজার ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। আরও হাজারো মানুষ এখনো ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকা পড়ে আছেন। অর্থাৎ যুদ্ধ-পূর্ব জনসংখ্যার প্রায় ৩ শতাংশ বা প্রতি ৩৩ জনে একজন নিহত হয়েছেন।
আহত ও স্বাস্থ্যসেবায় হামলা: প্রায় ১৪ জনে একজন গাজাবাসী আহত হয়েছেন। মোট আহতের সংখ্যা ১ লাখ ৬৯ হাজার ছাড়িয়েছে, যাদের অনেকেই গুরুতরভাবে পঙ্গু। ইউনিসেফের হিসেবে, ৩ থেকে ৪ হাজার শিশু এক বা একাধিক অঙ্গ হারিয়েছে। গত দুই বছরে অন্তত ১২৫টি স্বাস্থ্যকেন্দ্র ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
দুর্ভিক্ষ ও অনাহার: ইসরাইলের সামরিক অবরোধে গাজায় মানবিক সহায়তা কার্যত বন্ধ। খাদ্য সরবরাহেও নিষেধাজ্ঞা জারি রয়েছে। এমনকি ত্রাণ সংগ্রহের সময়ও গুলি চালানো হয়েছে ফিলিস্তিনিদের ওপর।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যমতে, অনাহারে এখন পর্যন্ত অন্তত ৪৫৯ জনের মৃত্যু হয়েছে, এর মধ্যে ১৫৪ জন শিশু।
জাতিসংঘ-সমর্থিত ইন্টিগ্রেটেড ফুড সিকিউরিটি ফেজ ক্লাসিফিকেশন (আইপিসি) গত ২২ আগস্ট জানিয়েছে, গাজার কিছু এলাকায় দুর্ভিক্ষ নিশ্চিত হয়েছে। সংস্থাটির পূর্বাভাস অনুযায়ী, জনসংখ্যার এক-তৃতীয়াংশেরও বেশি—প্রায় ৬ লাখ ৪০ হাজার মানুষ—দুর্ভিক্ষের ভয়াবহ ঝুঁকিতে (আইপিসি ফেজ–৫) রয়েছে।