১ দিনে জমি দখলমুক্ত সম্ভব, জানুন কার্যকর তিনটি আইনগত ধাপ
ছবি-সংগৃহীত
জমি দখল হয়ে গেলে অধিকাংশ মানুষ ভাবেন, তা আর ফিরে পাওয়া সম্ভব নয়। কিন্তু বর্তমানে ভূমি অপরাধ প্রতিরোধ ও প্রতিকার আইন ২০২৩ এবং প্রচলিত আদালতীয় ব্যবস্থার মাধ্যমে আইনগতভাবে সঠিক পদক্ষেপ নিলে খুব অল্প সময়ে জমি পুনরুদ্ধার সম্ভব। বিশেষ করে তিনটি ধাপ অনুসরণ করলে প্রশাসন ও আদালতের সহায়তায় দখলকৃত জমি ফেরত পাওয়া এখন অনেক সহজ।
প্রথম ধাপ: নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে আবেদন
ভূমি অপরাধ প্রতিরোধ ও প্রতিকার আইন ২০২৩ অনুযায়ী যদি কেউ জাল দলিল তৈরি করে বা প্রতারণার মাধ্যমে জমি দখল করে, তবে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি জেলা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে লিখিত আবেদন করতে পারেন। আবেদন করার জন্য মূল দলিল, খতিয়ান, জাতীয় পরিচয়পত্র ও প্রমাণপত্র সঙ্গে রাখতে হবে। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট প্রয়োজনে পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে অভিযানে সংযুক্ত করে দখলমুক্তি ও পুনর্বহাল কার্যকর করতে পারেন।
দ্বিতীয় ধাপ: ধারা ১৪৫ অনুযায়ী দ্রুত মোকদ্দমা
যদি দ্রুত জমি ফেরত নেওয়ার প্রয়োজন হয়, তবে ফৌজদারি কার্যবিধি (CrPC) অনুযায়ী ধারা ১৪৫-এর অধীনে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা করা যায়। এই মামলায় মূল গুরুত্ব দেওয়া হয় জমির বাস্তব দখল কার হাতে আছে তা প্রমাণের ওপর। ভূমি উপ-কমিশনার তদন্ত করে রিপোর্ট জমা দেবেন। প্রতিবাদী পক্ষ ১৫ দিনের মধ্যে জমি না ছাড়লে নির্বাহী আদেশ অনুযায়ী প্রশাসন তা পুনরুদ্ধার করে দিতে পারে।
তৃতীয় ধাপ: মালিকানা নিশ্চিত করতে ঘোষণামূলক মামলা
দীর্ঘমেয়াদি ও স্থায়ী সমাধানের জন্য সুনির্দিষ্ট প্রতিকার আইন (Specific Relief Act) এর সেকশন ৪২ অনুযায়ী দেওয়ানি আদালতে ঘোষণামূলক মামলা করতে হয়। এই রায়ে আদালত মালিকানা ঘোষণার মাধ্যমে ভবিষ্যতের জন্য চূড়ান্ত আইনি সুরক্ষা প্রদান করেন। এই রায় থাকলে পুলিশ কিংবা প্রশাসন তা বলবৎ করতে বাধ্য থাকে এবং ভবিষ্যতে দখলদার পুনরায় জমি দখল করতে পারে না।
বাস্তব পরিস্থিতিতে করণীয়
সব দলিল ও প্রমাণ যেমন রেজিস্ট্রিকৃত দলিল, খতিয়ান, নামজারির কপি, পুরনো মামলার কাগজপত্র বা আপত্তিপত্র নিরাপদে সংরক্ষণ করতে হবে। প্রতিটি ধাপে অভিজ্ঞ জমি-বিষয়ক আইনজীবীর সহায়তা নেওয়া জরুরি। দখল উদ্ধার করতে গিয়ে কোনো অবৈধ বা ঝুঁকিপূর্ণ পদক্ষেপ নেওয়া উচিত নয়। প্রয়োজনে প্রশাসনিক আদেশ কার্যকর করার জন্য পুনরায় পুলিশ সহায়তা চাইতে হবে।
জমি দখল প্রতিরোধ ও জমি ফেরত পাওয়া এখন আর অতটা কঠিন নয়। সঠিক আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করলে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের প্রশাসনিক ব্যবস্থা, ধারা ১৪৫-এর দ্রুত মোকদ্দমা এবং ঘোষণামূলক মামলা—এই তিনটি পথের মাধ্যমেই জমি আইনগতভাবে পুনরুদ্ধার করা সম্ভব। সচেতনতা, দলিলের সঠিক ব্যবহার এবং আইনগত সহায়তাই হতে পারে জমি ফেরত পাওয়ার সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য উপায়।