রাজধানীর অন্যতম শীর্ষ সরকারি হাসপাতাল কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল এখন স্বাস্থ্যসেবায় একটি অনন্য উদাহরণ। আধুনিক চিকিৎসা সুবিধা, ডিজিটাল সেবা ও রোগীবান্ধব পরিবেশ গড়ে তুলে হাসপাতালটি দেশের অন্যতম শীর্ষ সরকারি চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। এই পরিবর্তনের নেতৃত্বে রয়েছেন বর্তমান পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. সাইদুর রহমান, যিনি ২০২৩ সালের ১৭ অক্টোবর দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে সেবার মান উন্নয়নে যুগান্তকারী পদক্ষেপ নিয়েছেন।
অসাধারণ পরিসর ও রোগী সেবাঃ
বর্তমানে হাসপাতালটি ১,২০০ শয্যাবিশিষ্ট, যেখানে প্রতিদিন গড়ে ৮০০ থেকে ৮৫০ রোগী ভর্তি থাকে। আজকের হিসাবে ভর্তি রোগীর সংখ্যা ৮৪২ জন।বহির্বিভাগে চিকিৎসা নিচ্ছেন গড়ে ৫,৮০০ রোগী প্রতিদিন, যা সরকারি হাসপাতালগুলোর মধ্যে অন্যতম শীর্ষ অবস্থানে।বহির্বিভাগে ৮০% রোগী বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের (FCPS/MS/MD) পরামর্শ পান। মাত্র ১০ টাকার টিকিটে চিকিৎসা পাওয়ার সুযোগ সাধারণ মানুষের জন্য স্বাস্থ্যসেবা সহজলভ্য করেছে।
ডায়ালাইসিস ও উন্নত কার্ডিয়াক সেবাঃ
হাসপাতালের ডায়ালাইসিস সেন্টারে প্রতিদিন ১৫৯ জন রোগীর ডায়ালাইসিস করা হয় তিন শিফটে, যা সরকারি হাসপাতালে সবচেয়ে বড় ব্যবস্থাগুলোর একটি।এছাড়া প্রতিদিন গড়ে ১০ জন রোগীকে এঞ্জিওগ্রাফি সেবা দেওয়া হচ্ছে।হৃদরোগীদের জন্য রয়েছে ২৩ শয্যার CCU ও ২০ শয্যার ICU। পাশাপাশি, ৫০ শয্যার নতুন ICU নির্মাণাধীন, যা সম্পন্ন হলে গুরুতর রোগীদের চিকিৎসা আরও উন্নত হবে।২৪ ঘণ্টা ল্যাবরেটরি সেবা চালু রয়েছে, যা জরুরি চিকিৎসায় সহায়তা করছে।
ডিজিটাল সেবা ও রোগী-বান্ধব পরিবেশঃ
রোগীরা এখন অনলাইনে অ্যাপয়েন্টমেন্ট বুকিং ও ডিজিটাল পেমেন্ট সুবিধা পাচ্ছেন। এতে লাইন ধরে অপেক্ষার ঝামেলা কমেছে এবং দ্রুত সেবা নিশ্চিত হয়েছে।হাসপাতালের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, মানসম্মত খাবার এবং নিরাপত্তা রোগীদের আস্থা অর্জন করেছে।
রোগীদের অভিমতঃ
রুবেল হোসেন, বহির্বিভাগে চিকিৎসা নিতে আসা একজন রোগী বলেন—
এখন অনলাইনে সিরিয়াল বুক করতে পারি। ডাক্তাররা সময় দেন এবং ভালোভাবে শোনেন। সরকারি হাসপাতালে এত সুন্দর সেবা সত্যিই প্রশংসনীয়।
সাবিনা আক্তার, একজন ইনডোর রোগীর স্বজন জানান—
খাবারের মান অনেক ভালো। হাসপাতাল পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন এবং নিরাপদ।
রবিউল ইসলাম, আরেকজন রোগী বলেন—
মাত্র ১০ টাকায় বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ পাওয়া যায়। আমি কল্পনাও করিনি সরকারি হাসপাতালে এত ভালো সেবা পাওয়া সম্ভব।
পরিচালকের বক্তব্যঃ
হাসপাতালের উন্নয়নের বিষয়ে পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. সাইদুর রহমান বলেন—
“দায়িত্ব নেওয়ার পর চেষ্টা করেছি এমন পরিবেশ গড়ে তুলতে যেখানে রোগীরা মর্যাদার সঙ্গে চিকিৎসা পায়। কোনো অনিয়ম যাতে না থাকে, সেটি নিশ্চিত করাই আমার প্রথম লক্ষ্য। আমরা চাই কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল জাতীয় মানদণ্ডের রেফারেল সেন্টারে পরিণত হোক।”
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনাঃ
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ইতিমধ্যে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালকে জাতীয় মানের রেফারেল সেন্টার হিসেবে গড়ে তোলার পরিকল্পনা নিয়েছে।পরিচালক এই লক্ষ্যে সবার সহযোগিতা কামনা করেছেন।