
ছবি- শ্যামনগরে ত্রিপানি বিদ্যাপীঠে বীজবৈচিত্র্য মেলা।
২৪ জুলাই (বৃহস্পতিবার) সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার মুন্সিগঞ্জ ইউনিয়নের ত্রিপাণী বিদ্যাপীঠ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে সবুজ সংহতি ও এসএসএসটির আয়োজনে বারসিকের সহযোগিতায় এক অভিনব ও ব্যতিক্রমী বীজ বৈচিত্র্য ও নতুন প্রজন্মের সেতুবন্ধনে গ্রামীণ বীজ মেলা অনুষ্ঠিত হয়।
ত্রিপাণী বিদ্যাপীঠের প্রধান শিক্ষক আবুল কালাম মল্লিকের সভাপতিত্বে বিদ্যাপীঠের প্রায় ১৫০ জন ছাত্রছাত্রী, শিক্ষক-শিক্ষিকামন্ডলী, সবুজ সংহতির সদস্য ও বারসিক কর্মকর্তাবৃন্দের অংশগ্রহনে বীজ বৈচিত্র্য মেলা উৎসব মুখর পরিবেশ তৈরী হয়।
বীজ মেলায় এলাকা উপযোগী ১৬২ ধরনের স্থানীয় ধান, ২২ ধরনের শিম, ৬ ধরনের বেগুন, ৮ ধরনের মরিচ, ৮ ধরনের ডাটা শাকসহ অন্যান্য ফসলের স্থানীয় গ্রামীণ বীজ প্রদর্শনী করা হয়।
বীজ মেলার প্রারম্ভে ৬ষ্ট থেকে দশম শ্রেনীর ছাত্রছাত্রীদের জলবায়ু পরিবর্তন, জলবায়ু ন্যায্যতা, পরিবেশ, প্রতিবেশ, ম্যানগ্রোভ বন, স্থানীয় বীজ এবং কৃষকের গুরুত্বসহ উপকূলীয় এলাকার সমস্যা সম্পর্কে তাদের ধারনাগত স্পষ্টতা কুইজ প্রতিযোগিতার মাধ্যমে তুলে ধরা হয়।
মেলার আলোচনাসভায় শিক্ষার্থী দীপ্ত বলেন, আমরা আমাদের এলাকায় যে অনেক ধরনের দেশীয় বীজ আছে তা জানতে ও দেখতে পেলাম, এলাকায় যে এত ধরনের ধানের জাত আছে বা ধান হত সে সম্পর্কে আগে আমাদের ধারনা ছিল না।
অনুষ্ঠানের সভাপতি প্রধান শিক্ষক আবুল কালাম মল্লিক বলেন, ছেলেমেয়েদের স্থানীয় বীজ সম্পর্কে তেমন ধারনা কম, এলাকায় লবনাক্ততা ও প্রাকৃতিক দূযোর্গের কারণে অনেক স্থানীয় বীজ হারিয়ে গিয়েছে এবং আগের দিনে আমাদের বাবা-দাদাদের আমলে যে ধরনের স্থানীয় জাতের ফসল চাষ হত এখন আর হয় না। আমরা বীজের কথা বলতে গেলে আগে দোকানের হাইব্রীড বীজের কথা আমাদের মাথায় আসে। ভুলে যাচ্ছি আমাদের নিজস্ব স্থানীয় বীজের কথা। বীজ ব্যবসায়ীদের প্রলোভনে পড়ে অধিক ফলন ও মুনাফার আসায় অনেক কৃষক প্রতারিত ও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
মেলার সমাপনীতে বক্তব্য রাখেন বারসিকের আঞ্চলিক সমন্বয়কারী রামকৃষ্ণ জোয়ারদার,সবুজ সংহতির সদস্য ভূধর চন্দ্র, শিক্ষক নির্মল মন্ডল, শিক্ষক হরিপদ বিশ্বাস, শিক্ষক বিশ্বজীত মন্ডল প্রমুখ।
বক্তারা বক্তব্যে বলেন বীজ কৃষকের নিজস্ব সম্পদ। কিন্ত সে সম্পদ এখন ব্যবসায়ীর ব্যবসার উপাদানে পরিনত হয়েছে।বীজ সংরক্ষনের ধারনা ও গুরুত্বে সচেতনতার উপর আগামীতে বীজের বাজার নিয়ন্ত্রনের কর্পোরেট সেন্ডিকেট থেকে সাধারন চাষীরা বাঁচবে এবং দেশের খাদ্য নিরাপত্তা জোরদার হবে।
তারা আরও বলেন স্থানীয় জাতের বীজকে অবজ্ঞা করে অন্য কোনো অধিক ফলনশীল বীজ উৎপাদন করা কোনো ভাবেই সম্ভব না।নতুন প্রজন্মকে এই বীজ সম্পর্কে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও পারিবারিকভাবে সঠিক ধারনা দিতে হবে। তবেই আগামীতে সুন্দর ও সুষ্টু পরিবেশের পাশাপাশি খাদ্য সার্বভৌমত্ব অর্জনে সফলতা আসবে।
শিক্ষার্থীরা আগামীতে এ ধরনের আরো উপকূলীয় অঞ্চলের বৈচিত্র্য নির্ভর এবং ছাত্রছাত্রীদের নিজের এলাকা সম্পর্কে সঠিক ধারনা ও অভিযোজন দক্ষতা বৃদ্ধিতে কার্যকরী কর্মসূচির আয়োজনের আহবান জানান।