শিশুদের শরীর পুড়ে গেলে জরুরি করণীয়: দ্রুত পদক্ষেপেই বাঁচতে পারে একটি জীবন

শিশুদের শরীর পুড়ে যাওয়া একটি মারাত্মক ও হৃদয়বিদারক দুর্ঘটনা। আগুন, গরম পানি, তেল, বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট বা রাসায়নিক পদার্থে পোড়া শিশুর জন্য শুধু তীব্র শারীরিক যন্ত্রণা নয়, মানসিক ট্রমা ও স্থায়ী বিকলাঙ্গতার ঝুঁকিও বয়ে আনে। কিন্তু একটি ভুল সিদ্ধান্ত বা অসচেতনতা অনেক সময় পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তোলে। ফলে, এমন দুর্ঘটনার পরপরই করণীয় সম্পর্কে অভিভাবকদের স্পষ্ট ধারণা থাকা জরুরি।
বিশেষজ্ঞদের মতে, শিশুর শরীর পুড়ে গেলে দ্রুত ও সঠিক সিদ্ধান্তই তার জীবন বাঁচাতে পারে। সাধারণত শরীর পুড়ে যাওয়া তিনটি ধাপে ভাগ করা হয়—প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় ডিগ্রি পোড়া। প্রথম ডিগ্রিতে ত্বকের উপরিভাগে সামান্য লালচে ও ব্যথা দেখা যায়। দ্বিতীয় ডিগ্রিতে ফোস্কা পড়ে এবং তীব্র যন্ত্রণার সৃষ্টি হয়। তৃতীয় ডিগ্রিতে ত্বকের গভীর স্তরসহ স্নায়ু পুড়ে যায়, যা সবচেয়ে বিপজ্জনক।
দুর্ঘটনার পরপরই প্রথম করণীয় হলো—শিশুটিকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া এবং পোড়া স্থানে ১০ থেকে ২০ মিনিট ধরে ঠাণ্ডা (কিন্তু বরফ নয়) পানি ঢালা। এতে ব্যথা কিছুটা কমে এবং ত্বকের গভীর ক্ষতি রোধ করা যায়। পোড়া স্থানে কাপড় থাকলে তা সাবধানে খুলতে হবে, তবে কাপড় যদি ত্বকের সঙ্গে লেগে যায় তাহলে টানাটানি না করে চারপাশ কেটে আলাদা করতে হবে।
অনেক অভিভাবক তড়িঘড়ি করে দাঁতের মলম, ঘি, ডিম, তেল বা মাটি পোড়া স্থানে লাগান, যা একদমই করা যাবে না। এতে সংক্রমণের ঝুঁকি বহুগুণ বেড়ে যায়। এছাড়া ফোস্কা ফাটানো, ঘষে পরিষ্কার করা কিংবা বরফ ব্যবহার করাও বিপজ্জনক। এসবের পরিবর্তে পরিষ্কার ও শুকনো গজ বা পাতলা কাপড় দিয়ে পোড়া স্থান ঢেকে দ্রুত কাছাকাছি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন চিকিৎসকেরা।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটের চিকিৎসক ডা. সানজিদা রহমান বলেন, “শিশুদের পোড়া ক্ষতের ক্ষেত্রে এক মিনিট দেরিও অনেক বড় ক্ষতির কারণ হতে পারে। অনেক সময় সামান্য মনে হওয়া পোড়া গভীর ক্ষত তৈরি করে। তাই কোনো পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়াই সঠিক চিকিৎসা কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়াই শ্রেয়।”
বর্তমানে ঢাকায় শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, চট্টগ্রাম ও রাজশাহী মেডিকেল কলেজে বার্ন ইউনিট চালু রয়েছে। এসব কেন্দ্র ২৪ ঘণ্টা জরুরি সেবা দিয়ে থাকে।
শিশুদের নিরাপদ রাখতে রান্নাঘরে প্রবেশ সীমিত রাখা, গরম পানি ও কেটলি শিশুদের নাগালের বাইরে রাখা এবং বৈদ্যুতিক তার ঢেকে রাখা জরুরি। বাড়িতে অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র থাকা, স্যালাইন, গজ ও প্রাথমিক চিকিৎসার সরঞ্জাম প্রস্তুত রাখা এবং জরুরি নম্বর সংরক্ষণ করাও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
একটি সন্তান পোড়া আঘাতে পড়লে শুধু তার শরীরই নয়, পুরো পরিবারের জীবনে দীর্ঘস্থায়ী দুঃখ নেমে আসে। তাই আগে থেকেই সচেতনতা ও প্রস্তুতি থাকলে অনেক দুর্ঘটনা এড়ানো সম্ভব। শিশুদের সুরক্ষা ও চিকিৎসার ক্ষেত্রে সমাজের সকল স্তরের দায়িত্বশীল হওয়া জরুরি, যাতে আর কোনো শিশুর জীবন আগুনে ঝলসে না যায়।