কোটা সংস্কার আন্দোলন ২০২৫ সালে নতুন মাত্রা পায় ১৭ জুলাই থেকে। রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদের মৃত্যুর পরই আন্দোলন রূপ নেয় গণআন্দোলনে। ১৬ জুলাই পুলিশের হামলায় সাঈদের মৃত্যু বিক্ষুব্ধ ছাত্রসমাজকে ক্ষিপ্ত করে তোলে, যা আন্দোলনের বাঁক ঘুরিয়ে দেয়।
পরদিন ১৭ জুলাই ঢাকার বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলো ছাত্রলীগমুক্ত করতে মাঠে নামে সাধারণ শিক্ষার্থীরা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের হল থেকে বের করে দিয়ে হলগুলো ‘ছাত্রলীগমুক্ত’ ঘোষণা করা হয়।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক রিফাত রশিদ বলেন, ‘‘নারী হলগুলো মুক্ত হওয়ার পর মহসীন হলসহ একের পর এক হল ছাত্রলীগের দখলমুক্ত করা হয়।’’
একই দিনে সারাদেশে নিহত হন আবু সাঈদ, ওয়াসিমসহ অন্তত ছয়জন শিক্ষার্থী। নিহতদের আত্মার মাগফিরাত কামনায় রাজু ভাস্কর্যের সামনে গায়েবানা জানাজার আয়োজন করা হলেও পুলিশি হামলা, টিয়ারশেল নিক্ষেপ ও লাঠিচার্জে তা ব্যাহত হয়। বিকেলে ঢাবি উপাচার্যের বাসভবনের সামনে জানাজা পড়েন আন্দোলনকারীরা।
আন্দোলনকারীদের অভিযোগ, স্নাইপার ও সোয়াট টিম মোতায়েন করে শিক্ষার্থীদের ভয় দেখানোর চেষ্টা চলে। এছাড়া সারাদেশে পুলিশ ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সশস্ত্র হামলায় আহত হন শত শত শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষ।
১৭ জুলাই রাতেই ঢাকার যাত্রাবাড়ি, ফেনী, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, মুন্সিগঞ্জ, শরীয়তপুরসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বিক্ষোভ ও সড়ক অবরোধ শুরু হয়। যাত্রাবাড়ি ফ্লাইওভারের টোলপ্লাজায় আগুন ধরিয়ে দেয় বিক্ষুব্ধ জনতা, যা ৫ আগস্ট পর্যন্ত নিরাপত্তা বাহিনীর নিয়ন্ত্রণের বাইরে থাকে। আন্দোলনকারীরা একে ‘জুলাই আন্দোলনের লেলিনগ্রাদ’ হিসেবে উল্লেখ করেন।
সন্ধ্যার মধ্যে ক্যাম্পাস ও হল ফাঁকা করতে শিক্ষার্থীদের হুমকি দেয় পুলিশ। সেই রাতেই মোবাইল ইন্টারনেট বন্ধ করে দেয় সরকার, কিন্তু এতে পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়।
তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কালো শাড়ি পরে শোক প্রকাশ করলেও, সেটি জনগণের ক্ষোভ আরও উসকে দেয়। সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে সমালোচনা ও ট্রল।
সবশেষে ১৮ জুলাই থেকে শিক্ষার্থীরা ঘোষণা করে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’। পুলিশ, র্যাব, বিজিবির হামলা সত্ত্বেও সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ে গণআন্দোলন।