বাংলাদেশি পণ্যে যুক্তরাষ্ট্রের ৩৫% শুল্ক ঘোষণা বিপাকে পোশাক খাত

ডোনাল্ড ট্রাম্প : ছবি-সংগৃহীত
বাংলাদেশসহ ১৪টি দেশের রপ্তানি পণ্যের ওপর ৩৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। আগামী ১ আগস্ট থেকে এ শুল্ক কার্যকর হবে বলে সোমবার (৮ জুলাই) নিজের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে জানিয়েছেন তিনি। হোয়াইট হাউসের প্রেস সচিব ক্যারোলিন লেভিট জানিয়েছেন, সামনে আরও কিছু দেশকে শুল্কবিষয়ক চিঠি দেওয়া হতে পারে।
ট্রাম্পের এই ঘোষণায় দেশের তৈরি পোশাক রপ্তানি খাতে উদ্বেগের সৃষ্টি হয়েছে। কারণ, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের সর্ববৃহৎ একক বাজার। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) হিসাবে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশ প্রায় ৮৬৯ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে, যা দেশের মোট রপ্তানির ১৮ শতাংশেরও বেশি। এর মধ্যে ৮৫ শতাংশই তৈরি পোশাক।
গত ৩ এপ্রিল যুক্তরাষ্ট্র ৩৭ শতাংশ শুল্ক আরোপ করলেও তখন দর-কষাকষির সুযোগ রেখে তা তিন মাসের জন্য স্থগিত করেছিল। ফলে এতদিন বাংলাদেশের পণ্যের গড় শুল্কহার ছিল ১৫ শতাংশ, নতুন ৩৫ শতাংশ যোগ হয়ে সেটি দাঁড়াবে প্রায় ৫০ শতাংশে। বিশ্লেষকরা বলছেন, এতে বাংলাদেশের রপ্তানি প্রতিযোগিতা সক্ষমতা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
ট্রাম্প এক চিঠিতে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, বাংলাদেশ পাল্টা শুল্ক আরোপ করলে যুক্তরাষ্ট্রও শুল্কের হার আরও বাড়াবে। তবে ১ আগস্টের কার্যকর তারিখের আগে দর-কষাকষির সুযোগ রয়েছে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
এদিকে বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশির উদ্দিন ও জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ড. খলিলুর রহমান বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন। তারা ওয়াশিংটনে মার্কিন বাণিজ্য প্রতিনিধিদের সঙ্গে কয়েক দফা বৈঠক করেছেন। আগামী ৯ জুলাই আরেক দফা বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমান জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্র থেকে সামরিক সরঞ্জাম, বোয়িং উড়োজাহাজ, এলএনজি, গম ও তুলা আমদানি সহজ করার বিষয়েও আলোচনা চলছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভিয়েতনাম ইতিমধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সমঝোতা করে শুল্ক ৪৬ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২০ শতাংশে এনেছে, ফলে বাংলাদেশের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় তারা এগিয়ে যাবে। বিজিএমইএ ও বিকেএমইএর নেতারা অভিযোগ করেছেন, বেসরকারি খাতকে দর-কষাকষি প্রক্রিয়ায় সম্পৃক্ত করা হয়নি, যা পরিস্থিতি আরও জটিল করেছে।
বিশ্লেষকদের মতে, এখনই বিকল্প বাজার খুঁজতে হবে, দ্বিপক্ষীয় আলোচনার গতি বাড়াতে হবে এবং পণ্য ও বাজার বৈচিত্র্য আনতে হবে। না হলে শীর্ষ বাজারে এই ‘বাণিজ্যিক ভূমিকম্প’ তৈরি পোশাকসহ পুরো রপ্তানি খাতকে বড় ধরনের ধাক্কা দিতে পারে।