গাজা উপত্যকায় দায়িত্ব পালন করা এক ইসরায়েলি রিজার্ভ সেনা স্কাই নিউজকে দেওয়া এক বিরল ভিডিও সাক্ষাৎকারে বিস্ফোরক অভিযোগ এনেছেন। তিনি দাবি করেছেন, তার ইউনিটকে প্রায়ই ‘নো-গো জোন’ বলে চিহ্নিত এলাকায় যে-ই প্রবেশ করুক, সশস্ত্র হোক বা নিরস্ত্র, তাকে গুলি করে হত্যা করতে নির্দেশ দেওয়া হতো।
নিজের নিরাপত্তার জন্য নাম গোপন রেখে ওই সেনা জানান, “যেই নির্ধারিত সীমারেখা পার হবে, সে মরবে — কে সে, তা গুরুত্বপূর্ণ নয়।” তিনি অভিযোগ করেন, গাজায় বেসামরিকদের নির্বিচারে গুলি করা হতো এবং প্রায়ই সেনাদের আচরণ নির্ভর করত তাদের কমান্ডারের মর্জির ওপর।
তিনি জানান, তিনি ইসরায়েল ডিফেন্স ফোর্সের (আইডিএফ) ২৫২তম ডিভিশনের সদস্য হিসেবে গাজার কেন্দ্র দিয়ে গড়ে ওঠা ‘নেটজারিম করিডোরে’ দুই দফায় মোতায়েন ছিলেন — যা গাজা ভূখণ্ডকে দুই ভাগে ভাগ করে দেয়।
তিনি বলেন, “আমরা এমন ঘর দখল করেছি যেখানে একসময় গাজাবাসীরা থাকত। সেই ঘর ঘিরে ‘নো-গো জোন’ তৈরি করা হতো। বলা হতো গাজার সবাই জানে এখানে ঢোকা মানা, কিন্তু তারা কীভাবে জানবে?”
তার ভাষ্যমতে, কিশোররা কখনো সাইকেল চালিয়ে সীমারেখায় চলে এলে তাকেও গুলি করা হয়েছে। অনেক সেনাই মনে করতেন, গাজার কেউই নির্দোষ নয় — ৭ অক্টোবর হামাসের হামলার জন্য পুরো গাজা জনগণকেই দায়ী করা হতো। কেউ কেউ বলতো, “ওরা আমাদের কষ্ট দেখে আনন্দ করছিল, তাই ওদের মরাই উচিত।”
তিনি অভিযোগ করেন, নিয়মিত এমন কথাবার্তা হতো এবং বেশিরভাগ কমান্ডারই তা সমর্থন করতেন। অনিয়মিত আদেশের উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, কখনো সীমা পার হলে গুলি করতে বলা হতো, কখনো বলা হতো মরদেহ নিতে এলে বন্দি করতে — আবার কিছুক্ষণের মধ্যেই নতুন আদেশ আসত, সবাইকে গুলি করতে হবে।
সেনাটি বলেন, “সব কিছু যেন ‘ওয়াইল্ড ওয়েস্ট’-এর মতো হয়ে গেছে। কেউ যা খুশি করছে, কোনো জবাবদিহিতা নেই।” তিনি আরও বলেন, “আমি মনে করি, খুব খারাপ কিছুতে অংশ নিয়েছি। তাই এখন সত্যিটা প্রকাশ করতে চাই।”
তিনি স্বীকার করেন, ইসরায়েলি সমাজে সেনাবাহিনীর সমালোচনা করা প্রায় অসম্ভব এবং কেউ তা করলে দেশদ্রোহী হিসেবে দেখা হয়। তিনি আশা প্রকাশ করেন, তার বক্তব্য হয়তো সত্যকে সামনে আনতে সাহায্য করবে।
এদিকে আইডিএফ এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, তারা আন্তর্জাতিক আইন ও নিজস্ব নিয়ম মেনেই কাজ করছে এবং বেসামরিক ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে সব বাস্তবসম্মত পদক্ষেপ নিচ্ছে। তবে এ অভিযোগের বিস্তারিত তথ্য না থাকায় তারা আলাদা করে কোনো তদন্ত শুরু করতে পারছে না। যথাযথ তথ্য পেলে পূর্ণাঙ্গ তদন্তের আশ্বাস দিয়েছে আইডিএফ।
মানবাধিকার সংস্থাগুলো বলছে, এমন অভিযোগগুলো যুদ্ধাপরাধের আওতায় পড়ে এবং এর সুষ্ঠু আন্তর্জাতিক তদন্ত প্রয়োজন।