বাংলাদেশে এআই অপব্যবহার রোধে নেই কার্যকর আইন বাড়ছে শঙ্কা

গত বছরের আগস্টে দেশের আটটি জেলায় ভয়াবহ বন্যার সময় একটি সাদা-কালো ছবি ভাইরাল হয়—যেখানে দেখা যায়, তিন-চার বছরের এক শিশু প্রায় কাঁধ পর্যন্ত বন্যার পানিতে দাঁড়িয়ে আছে। আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল থেকে শুরু করে অভিনেত্রী পরীমণিও সেই ছবি শেয়ার করেছিলেন। তবে পরে জানা যায়, হৃদয় নাড়া দেওয়া সেই ছবিটি বাস্তবে তোলা নয়, তৈরি হয়েছিল আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এআই) প্রযুক্তি ব্যবহার করে।
এই ঘটনা স্পষ্ট করেছে, বাংলাদেশে এআই-এর সম্ভাবনার সঙ্গে সঙ্গে এর অপব্যবহারও বাড়ছে। অথচ দেশের এই খাতে এখনো নেই কোনো পূর্ণাঙ্গ আইন, নীতিমালা বা কার্যকর গাইডলাইন। ফলে অনেকে এটিকে দেশের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্য প্রযুক্তি ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক বিএম মইনুল হোসেন বলেন, জেনারেটিভ এআইয়ের কারণে যেকোনো মানুষের কণ্ঠ বা চেহারা সহজেই নকল করা সম্ভব হচ্ছে, যা সারা বিশ্বের জন্যই বিপদ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
তথ্যপ্রযুক্তি বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপদেষ্টা ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব জানিয়েছেন, সরকার জাতীয় এআই পলিসি তৈরিতে কাজ করছে। তবে খসড়া নীতি এখনো চূড়ান্ত হয়নি।
বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রযুক্তি যেমন জীবন সহজ করে, তেমনি অপব্যবহার হলে তৈরি করে ভয়াবহ পরিস্থিতি। সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী রাশিদা চৌধুরী নিলু বলেন, ‘‘কোনো প্রযুক্তি কতটুকু ব্যবহার করা যাবে, সেটির সীমা ও জবাবদিহিতা না থাকলে অপব্যবহার ঠেকানো সম্ভব নয়।’’
এআই খাতে বাংলাদেশের সীমাবদ্ধতার পাশাপাশি বিশ্বের বহু দেশ ইতিমধ্যেই কঠোর আইন ও নীতি তৈরি করেছে। ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন এআই আইন পাস করেছে, যুক্তরাষ্ট্রে রয়েছে এক্সিকিউটিভ অর্ডারসহ একাধিক আইন, কানাডা ও ভারতও এআই নীতিমালা কার্যকর করছে। এমনকি সংযুক্ত আরব আমিরাত ও চীনও এআই ব্যবহার নিয়ে কঠোর নীতি প্রণয়ন করেছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশে এআইকে সঠিকভাবে কাজে লাগাতে হলে শিগগিরই স্পষ্ট আইন, নীতিমালা ও গাইডলাইন তৈরি করতে হবে, যাতে এর সুবিধা যেমন পাওয়া যায়, তেমনি অপব্যবহারও বন্ধ করা সম্ভব হয়।