পায়ের কিছু ছোট লক্ষণেই বুঝে নিন শরীরে ভিটামিন ডি-এর ঘাটতি বলছেন বিশেষজ্ঞরা

আমাদের দৈনন্দিন জীবনে কত অজানা সমস্যাই না ঘটে যায়! তবে ভিটামিন ডি-এর ঘাটতিকে আমরা অনেকেই গুরুত্ব দিই না। অথচ চিকিৎসকরা বলছেন, অল্প কিছু লক্ষণেই বুঝে নেওয়া যায় শরীরে ভিটামিন ডি কমে গেছে কি না, বিশেষ করে পায়ের দিকে নজর দিলে সহজেই পাওয়া যায় এই সতর্ক সংকেত।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের বিশেষজ্ঞ ডাক্তার মাহফুজা রহমান জানিয়েছেন, বর্তমানে দেশের শহুরে মানুষজনের মধ্যে ভিটামিন ডি-এর স্বল্পতা খুবই সাধারণ একটি সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারণ কর্মব্যস্ততা আর বাড়তি গৃহকেন্দ্রিক জীবনধারা মানুষকে দিনের পর দিন সূর্যের আলো থেকে দূরে রাখছে। আর সেখানেই শিকড় গাড়ছে ভিটামিন ডি-এর অভাব।
এছাড়া বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের পুষ্টি ও হরমোন বিশেষজ্ঞ ডা. মো. তানভীর আহমেদ বলছেন, ‘‘ভিটামিন ডি আমাদের হাড়, দাঁত, পেশি, এমনকি স্নায়ুতন্ত্র ঠিক রাখতে অত্যন্ত জরুরি। পায়ের ব্যথা বা অস্বাভাবিক দুর্বলতা প্রায়ই প্রথম সতর্কবার্তা হিসেবে কাজ করে।’’
তাহলে প্রশ্ন হচ্ছে, কোন কোন লক্ষণে বুঝবেন শরীরে এই গুরুত্বপূর্ণ ভিটামিনের ঘাটতি তৈরি হচ্ছে?
চিকিৎসকদের মতে, প্রথমেই খেয়াল রাখুন পায়ের পেশীতে অস্বস্তি বা অল্পতেই টান ধরা নিয়ে। অনেকেই রাতে বা দীর্ঘক্ষণ বসে থাকার পর পায়ের পেশী শক্ত হয়ে যাওয়ার অভিযোগ করেন, যা শুধু পানিশূন্যতা নয়, ভিটামিন ডি-এর অভাব থেকেও হতে পারে।
দ্বিতীয়ত, হাড়ে অস্বাভাবিক ব্যথা বা হাঁটার সময় পায়ের পাতায় বা গোড়ালিতে অল্পতেই ব্যথা অনুভূত হলে তা উপেক্ষা করবেন না। ভিটামিন ডি শরীরে ক্যালসিয়াম শোষণে সাহায্য করে, যা হাড়কে শক্ত রাখে। এর অভাবে হাড় ক্রমে দুর্বল হতে শুরু করে।
তৃতীয়ত, যারা বারবার পায়ের গোড়ালি ফাটার সমস্যায় ভুগছেন অথচ পর্যাপ্ত ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করেও ফল পাচ্ছেন না, তারা একবার ভিটামিন ডি পরীক্ষা করিয়ে দেখতে পারেন। কারণ দীর্ঘস্থায়ী শুষ্ক ত্বক অনেক সময় ভেতরের পুষ্টি ঘাটতির ইঙ্গিত দেয়।
চতুর্থত, অল্পতেই পা ভারি বা ক্লান্ত লাগা কিংবা দিনের শুরুতেই পায়ে জড়তা অনুভব হওয়া — এটিও অবহেলা করার মতো নয়। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ডাক্তার মাহফুজা রহমান বলেন, ‘‘অনেকেই মনে করেন একটু বিশ্রাম নিলেই এই ক্লান্তি কেটে যাবে। কিন্তু এটি যদি নিয়মিত ঘটে, তাহলে তা শরীরের ভেতরের বড় কোনো ঘাটতির লক্ষণও হতে পারে।’’
ভিটামিন ডি এর মূল উৎস সূর্যের আলো হলেও শহরের মানুষদের জন্য সহজে রোদে যাওয়া যেন আর হয়ে উঠছে না। বঙ্গবন্ধু মেডিকেলের পুষ্টি বিশেষজ্ঞদের মতে, দিনে অন্তত ১৫ থেকে ২০ মিনিট সরাসরি সূর্যের আলোতে পা, হাত বা মুখ খোলা রাখা উচিত। বিশেষ করে সকাল আটটা থেকে দশটার মধ্যে এই অভ্যাসটি সবচেয়ে কার্যকর।
অনেকে খাদ্যাভ্যাসেও সচেতন থাকেন না। অথচ কিছু সাধারণ খাবার সহজেই এই ঘাটতি পূরণ করতে সাহায্য করতে পারে। যেমন, সামুদ্রিক মাছ, ডিমের কুসুম, দুধ, দই, ছানা ইত্যাদি নিয়মিত খাবারে রাখলে শরীরে প্রাকৃতিকভাবে ভিটামিন ডি-এর মাত্রা বাড়তে থাকে।
তবে অনেক সময় সঠিক খাবার ও রোদেও ঘাটতি পূরণ না হলে চিকিৎসকের পরামর্শে সাপ্লিমেন্ট খাওয়া যেতে পারে। তবে তা অবশ্যই নিজে থেকে না নিয়ে রক্ত পরীক্ষা করে তারপর চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করে খাওয়াই নিরাপদ।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, শিশু, বৃদ্ধ ও গর্ভবতী নারীদের মধ্যে ভিটামিন ডি-এর ঘাটতি বেশি দেখা যায়। তবে কর্মজীবী যুবক-যুবতীরাও ঝুঁকির বাইরে নন। তাই পরিবারে যেকোনো বয়সী সদস্য যদি প্রায়ই পায়ের পেশীতে ব্যথা, অস্থি দুর্বলতা, ত্বক শুষ্ক হওয়া বা অস্বাভাবিক ক্লান্তি অনুভব করেন, তাহলে আর দেরি না করে একবার পরীক্ষা করিয়ে নেওয়া ভালো।
চিকিৎসকরা জোর দিয়ে বলছেন, কোনো অস্বস্তিকে কখনোই হালকাভাবে নেবেন না। আপনার পায়ের অজানা ব্যথাই হতে পারে শরীরের ভেতরকার বড় রোগের প্রথম সঙ্কেত। সময়মতো সচেতন হওয়া আর চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়াই হতে পারে সুস্থ থাকার সেরা উপায়।
শরীর সুস্থ থাকলে মনও ভালো থাকে। তাই এখন থেকেই পরিবারের সবাইকে বলুন, রোদে কিছুক্ষণ সময় কাটান, খাবারে ভিটামিন ডি-এর উৎস বাড়ান আর পায়ের অজানা ব্যথাকে কখনো অবহেলা করবেন না। নিজের যত্ন নিন, পরিবারকেও সচেতন করুন — সুস্থ থাকুন সবাই।