| ২৬ জুন ২০২৫
শিরোনাম:

নর্থ সাউথ গ্রুপের হাইকোর্ট, রাজউক ও জেলা প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞা অমান্য: পেইড প্রতিবাদে বৈধতা আসে না, প্রকল্প বিক্রি চলছে অবৈধভাবে

নর্থ সাউথ গ্রুপের হাইকোর্ট, রাজউক ও জেলা প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞা অমান্য: পেইড প্রতিবাদে বৈধতা আসে না, প্রকল্প বিক্রি চলছে অবৈধভাবে

নর্থ সাউথ গ্রুপের লোগো ও পেইড বিজ্ঞাপনচিত্র, যেখানে অর্থের বিনিময়ে ‘প্রতিবাদ’ ছাপিয়ে নিজেদের বৈধতা প্রমাণের অপচেষ্টা চালিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।

নর্থ সাউথ ইন্ডাস্ট্রিয়াল সিটি,নিরাপদ ভ্যালি,নর্থ সাউথ গ্রীন সিটি নামে  বিতর্কিত আবাসন প্রকল্প পরিচালনা করছে নর্থ সাউথ গ্রুপ। অথচ এসব প্রকল্পের কার্যক্রমের বিরুদ্ধে রয়েছে হাইকোর্টের রায়, রাজউকের নিষেধাজ্ঞা এবং গাজীপুর জেলা প্রশাসনের সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা। সব নিষেধাজ্ঞা ও সতর্কতা সত্ত্বেও প্রতিষ্ঠানটি গোপনে প্লট বিক্রির কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে বলে একাধিক সূত্রে জানা গেছে।

এদিকে গত ১৫ জুন, দেশের জনপ্রিয় আবাসনভিত্তিক অনুসন্ধানী নিউজ পোর্টাল ‘আবাসন নিউজ ২৪’–এ “নর্থ সাউথ গ্রুপের জালিয়াতি ফাঁস: হাইকোর্টের রায়, প্রকল্প বন্ধ, বিপাকে গ্রাহকরা” শিরোনামে একটি অনুসন্ধান প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়, যা দেশজুড়ে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দেয়। ওই প্রতিবেদনে প্রকল্পের অবৈধ কার্যক্রম, প্রশাসনিক অভিযান, আদালতের আদেশ এবং ভুক্তভোগী গ্রাহকদের বক্তব্যসহ বিস্তারিত তথ্য প্রকাশিত হয়।

প্রতিবেদনের প্রভাবে নর্থ সাউথ গ্রুপের বিরুদ্ধে জনমতের চাপ বাড়তে থাকে। কিন্তু আজ ২৬ জুন ২০২৫, দৈনিক যুগান্তর পত্রিকায় প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মাহফুজুর রহমানের স্বাক্ষরিত একটি পেইড ‘প্রতিবাদ’ বিজ্ঞাপন প্রকাশিত হয়। এতে প্রকল্পের বিরুদ্ধে কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই—এমন বার্তা দিয়ে প্রতিষ্ঠানটি জনমত প্রভাবিত করার চেষ্টা চালাচ্ছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

 

রাজউকের পক্ষ থেকে ইতিমধ্যে নিরাপদ ভ্যালি প্রকল্পটি অবৈধ ঘোষণা করে কার্যক্রম বন্ধে চিঠি দেওয়া হয়েছে। একইভাবে হাইকোর্ট নর্থ সাউথ ইন্ডাস্ট্রিয়াল সিটি প্রকল্প বাতিল করে দেয়। তা সত্ত্বেও নর্থ সাউথ গ্রুপ উল্লিখিত প্রকল্পে গোপনে প্লট বিক্রি চালিয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

 

গাজীপুর সদর উপজেলার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জানান, আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী আমরা একাধিকবার এলাকা পরিদর্শন করেছি। মাইকিং, ব্যানার টানানোসহ সাধারণ জনগণকে সতর্ক করেছি। এরপরও যদি তারা কার্যক্রম চালাতে থাকে, তাহলে আরও কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

গাজীপুর সদর উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোঃ মঈন খান এলিস আবাসন নিউজ ২৪’-কে বলেন, ঐতিহ্যবাহী বেলাই বিলে কোনো ধরনের আবাসন প্রকল্প বা ভরাট কার্যক্রম অনুমোদনযোগ্য নয়। হাইকোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী আমরা একাধিকবার অভিযান পরিচালনা করে নর্থ সাউথ গ্রুপের অবৈধ কার্যক্রম বন্ধ করেছি এবং গড়ে ওঠা স্থাপনা ভেঙে দিয়েছি। এই বিষয়ে গাজীপুর জেলা প্রশাসন, পরিবেশ অধিদপ্তর, বন বিভাগ ও রাজস্ব বিভাগ পুরো বিষয়টি সম্পর্কে অবগত রয়েছে। আমাদের নির্দেশনায় প্রকল্পের কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এরপরও যদি তারা গোপনে কার্যক্রম চালায় বা প্লট বিক্রি করে, তাহলে আমরা তাদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

এই পরিস্থিতিতে সংবাদপত্রে ‘প্রতিবাদ’ নামে পেইড বিজ্ঞাপন প্রকাশ করাকে ‘সাংবাদিকতা নয়, বরং জনমত প্রভাবের ব্যর্থ অপপ্রয়াস’ হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন অভিজ্ঞ সংবাদকর্মীরা।

ছবি সংগৃহীত: এটি দৈনিক যুগান্তরের পেইড বিজ্ঞাপন চার্ট, যেখানে অর্থ দিলেই যে কেউ প্রতিবাদ বিজ্ঞাপন দিতে পারে। নর্থ সাউথ গ্রুপ এই সুযোগকে অপব্যবহার করে টাকা দিয়ে ‘প্রতিবাদ’ ছাপিয়ে হাইকোর্ট, রাজউক ও জেলা প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে জনমত বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে।

দৈনিক যুগান্তরের একজন দায়িত্বশীল সিনিয়র রিপোর্টার নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, এই ধরনের ‘প্রতিবাদ’ আসলে অর্থের বিনিময়ে প্রকাশিত একটি বাণিজ্যিক বিজ্ঞাপন। এটি কোনো প্রকৃত সাংবাদিকতাপ্রসূত প্রতিবেদন নয়। পত্রিকার নির্ধারিত হারে প্রতি ইঞ্চি বা প্রতি কলাম হিসেবে টাকা দিয়ে যেকোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান বিজ্ঞাপন দিতে পারে। কিন্তু এতে প্রকৃত সংবাদ বা তদন্তমূলক রিপোর্টের সত্যতা অস্বীকার করা যায় না।

 

এই বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন দেশের বেশ কয়েকজন বিশিষ্ট নাগরিক। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক এবং মানবাধিকার বিশেষজ্ঞ ড. মো. শাহীনুর রহমান বলেন, সংবাদ মুছে দিয়ে ও টাকার বিনিময়ে প্রতিবাদ বিজ্ঞাপন ছাপিয়ে সত্যকে ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা জাতির জন্য বিপজ্জনক বার্তা। সত্য প্রকাশে যদি বাধা দেওয়া হয়, তাহলে সাধারণ মানুষের আস্থা হারিয়ে যায়।

সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ব্যারিস্টার রোকন উদ্দিন মাহমুদ বলেন, আদালতের রায় অমান্য করে প্রকল্প পরিচালনা করা গুরুতর অবজ্ঞাসূচক অপরাধ। প্রশাসনের উচিত এমন প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে দ্রুত কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া।

বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি ও জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক কামরুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, কোনো গণমাধ্যম যদি টাকা নিয়ে সত্য প্রতিবেদন সরিয়ে ফেলে এবং বিপরীতে মিথ্যাচার প্রচার করে, তা হলে সেটি আর গণমাধ্যম থাকে না, সেটি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়।

এদিকে বহুবার চেষ্টা করেও নর্থ সাউথ গ্রুপের সিইও ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) মাহফুজুর রহমানের কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। ফোন ও ই-মেইলে যোগাযোগ করেও তিনি মন্তব্য করতে রাজি হননি।

এই বিষয়ে আইনজীবী ব্যারিস্টার গোলাম মহিউদ্দিন বলেন, যারা রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে ছিলেন, তাদের কাছ থেকে আমরা আরও বেশি সততা ও দায়িত্বশীলতা আশা করি। কোনো সাবেক সামরিক কর্মকর্তা যদি পরিচয় ব্যবহার করে সাধারণ মানুষকে প্রতারণা করেন, তাহলে তার জবাবদিহি আরও বেশি কঠিন হওয়া উচিত।

এদিকে প্রকল্পটির গ্রাহক ও জমি ক্রেতারা চরম দুশ্চিন্তায় দিন কাটাচ্ছেন। রফিকুল ইসলাম নামে এক প্রবাসী বলেন, জীবনের শেষ সঞ্চয় দিয়ে প্লট কিনেছিলাম। এখন জানি সব কিছুই ভুয়া।প্রকল্প বাতিল, কেউ কোনো উত্তর দেয় না। বিধবা নারী শামীমা আক্তার বলেন, সন্তানের ভবিষ্যতের কথা ভেবে জমি কিনেছিলাম। এখন বুঝি আমরা শুধু প্রতারণার শিকার। সরকার যেন আমাদের পাশে দাঁড়ায়।

 

নর্থ সাউথ গ্রুপ বর্তমানে বিভিন্ন নাম ব্যবহার করে তাদের প্রকল্পের প্রচার চালিয়ে যাচ্ছে। এ বিষয়ে প্রশাসনের পক্ষ থেকে সাধারণ জনগণকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানানো হয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, হাইকোর্ট, রাজউক এবং জেলা প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞা থাকা প্রকল্পে বিনিয়োগ করা আইনগত ঝুঁকিপূর্ণ। তাই জমি বা ফ্ল্যাট কেনার আগে যথাযথ যাচাই-বাছাই করতে হবে।

 

এদিকে নর্থ সাউথ গ্রুপের বর্তমান উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাহবুবুর রহমান খান-এর বিরুদ্ধে নারী কেলেঙ্কারির অভিযোগ উঠেছে। এ বিষয়ে একটি এক্সক্লুসিভ অনুসন্ধান প্রতিবেদন শিগগিরই আবাসন নিউজ ২৪-এ প্রকাশিত হবে।

হাইকোর্টের আদেশ, রাজউকের নোটিশ এবং জেলা প্রশাসনের বারবার অভিযান সত্ত্বেও যদি কেউ অবৈধভাবে প্রকল্প চালিয়ে যায় এবং প্রতারণা অব্যাহত রাখে, তাহলে সেটা শুধু আবাসন খাত নয়, পুরো সমাজ ব্যবস্থার জন্যই হুমকি। তাই রাষ্ট্র এবং প্রশাসনের দায়িত্ব এদের বিরুদ্ধে যথাযথ ও দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা।

কুষ্টিয়ায় আট লক্ষ টাকার ব্যান্ডরোলযুক্ত নকল বিড়ি জব্দ

নর্থ সাউথ গ্রুপের হাইকোর্ট, রাজউক ও জেলা প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞা অমান্য: পেইড প্রতিবাদে বৈধতা আসে না, প্রকল্প বিক্রি চলছে অবৈধভাবে

কুষ্টিয়ায় ৪৭ বিজিবির অভিযানে সরকারের রাজস্ব ফাঁকি দেওয়া আট লাখ শলাকা নকল ব্যান্ডরোলযুক্ত বিড়ি জব্দ করা হয়েছে। বুধবার বিকাল ৫ টার দিকে জেলার ভেড়ামারা উপজেলার ষোলদাগ বড় মসজিদ নামক স্থানে অভিযান পরিচালনা করেন কুষ্টিয়া ব্যাটালিয়ন (৪৭ বিজিবি)।

কুষ্টিয়া ব্যাটালিয়ন (৪৭ বিজিবি) সূত্রে জানা যায়, সরকারের মোটা অংকের টাকা রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে কুষ্টিয়া জেলায় কতিপয় অসাধু চক্র দীর্ঘদিন ধরে নকল ব্যান্ডরোলযুক্ত বিড়ি উৎপাদন, বিক্রি ও বাজারজাত করে আসছে। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে বুধবার বিকালে কুষ্টিয়া ব্যাটালিয়নের (৪৭ বিজিবি) সহকারী পরিচালক মো. জাকিরুল ইসলামের নেতৃত্বে নকল ও চোরাকারবারি বিরোধী অভিযান পরিচালনা করা হয়। এসময় ষোলদাগ বড় মসজিদ নামক স্থান থেকে ৮ লাখ শলাকা নকল ব্যান্ডরোলযুক্ত আকিজ বিড়ি, কারিকর বিড়িসহ অন্যান্য বিড়ি আটক করা হয়েছে। যার বর্তমান বাজার মূল্য ৮ লক্ষ ২৬ হাজার টাকা বলে নিশ্চিত করেছেন বিজিবি। তবে জব্দকৃত বিড়ির মালিককে পাওয়া যায়নি।

কুষ্টিয়া ব্যাটালিয়নের সহকারী পরিচালক মো. জাকিরুল ইসলাম বলেন, অভিযানে বিপুল পরিমান রাজস্ব ফাঁকি দেওয়া নকল বিড়ি জব্দ করা হয়েছে। নকল ও অবৈধ পণ্যের বিরুদ্ধে সরকারের জিরো টলোরেন্স নীতি চালু রয়েছে। যারা দেশের রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে অবৈধ ভাবে ব্যবসা পরিচালনা করবে তাদের কাউকে ছাড় দেয়া হবে না। জব্দকৃত নকল বিড়ি কাস্টমস অফিসে জমা দেওয়া হবে। নকলের বিরুদ্ধে আমাদের কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।

শ্যামনগরে দরিদ্র নারীদের মাঝে ছাগল বিতরণ

নর্থ সাউথ গ্রুপের হাইকোর্ট, রাজউক ও জেলা প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞা অমান্য: পেইড প্রতিবাদে বৈধতা আসে না, প্রকল্প বিক্রি চলছে অবৈধভাবে

সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলায় বৃহস্পতিবার(২৬ জুন) সকালে বাংলাদেশ এনজিও ফাউন্ডেশনের সহায়তায় নকশীকাঁথা মহিলা সংগঠনের বাস্তবায়নে দরিদ্র নারীদের মাঝে বকরি ছাগল বিতরণ করা হয়েছে।

দরিদ্র, অসহায় নারীদের অর্থনৈতিকভাবে সাবলম্বী করতে উপজেলা পরিষদ চত্তরে শ্যামনগরের বিভিন্ন গ্রামের ২০ জন নারীদের মাঝে ৪০টি বকরি ছাগল বিতরণ করা হয়।

ছাগল বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন শ্যামনগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোছাঃ রণী খাতুন।

বিশেষ অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা সহকারী কমিশনার ভূমি আব্দুল্লাহ আল রিফাত, উপজেলা কৃষি অফিসার নাজমুল হুদা, সিনিয়র উপজেলা মৎস্য অফিসার তুষার মজুমদার, উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা শারিদ বিন শফিক, উপজেলা ভেটেনারী সার্জন ডাঃ সুব্রত কুমার বিশ্বাস, উপজেলা ওসিসি প্রোগ্রাম অফিসার প্রনব কুমার বিশ্বাস প্রমুখ। অনুষ্ঠানে প্রকল্প সম্পর্কে বক্তব্য রাখেন নকশীকাঁথার পরিচালক চন্দ্রিকা ব্যানার্জী।

২০২৪-২৫ অর্থ বছরের বিশেষ বরাদ্ধ থেকে এ ছাগল বিতরণ করা হয়।
ছাগল পেয়ে নারীরা বলেন একটি ছাগল পালন করে আরও বেশি ছাগলের বাচ্চা তৈরী ও বিক্রীর মাধ্যমে স্বাবলম্বী হতে চেষ্টা করবেন।

ওবায়দুল কাদেরের আমলে দুর্নীতিতে ছেয়ে গিয়েছিল সড়ক ও সেতু মন্ত্রণালয়, ফাঁস হলো কমিশনের খেলা

নর্থ সাউথ গ্রুপের হাইকোর্ট, রাজউক ও জেলা প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞা অমান্য: পেইড প্রতিবাদে বৈধতা আসে না, প্রকল্প বিক্রি চলছে অবৈধভাবে

আওয়ামী লীগ সরকারের টানা সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে ওবায়দুল কাদের ছিলেন সবচেয়ে ক্ষমতাধর মন্ত্রীদের একজন। দীর্ঘ সাড়ে ১২ বছর তিনি সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে ছিলেন। নিজের মুখে বারবার দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর বক্তব্য দিলেও বাস্তবে তার নেতৃত্বে মন্ত্রণালয়টি পরিণত হয়েছিল একটি শক্তিশালী কমিশন সিন্ডিকেটে।

অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, ওবায়দুল কাদের ঘুষ নয়, কমিশনের মাধ্যমে দুর্নীতির পথ তৈরি করেছিলেন। সড়ক ও সেতু বিভাগের যেকোনো কাজ পেতে হলে ঠিকাদারদের ২০ শতাংশ কমিশন দিতে হতো। এ কমিশন প্রকল্প বাজেটের মধ্যেই যোগ করা হতো, যাতে তা আইনগতভাবে ধরা না পড়ে। এমনকি ছোট কাজেও কমিশন বাধ্যতামূলক ছিল।

সড়ক বিভাগে ১২ বছরে প্রায় এক লাখ কোটি টাকার বেশি লুটপাটের অভিযোগ উঠেছে। সওজ বা সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের দেওয়া তথ্যমতে, মন্ত্রণালয় থেকে বরাদ্দ পাওয়া ১ লাখ ৬৯ হাজার কোটি টাকার মধ্যে ১ লাখ ২৭ হাজার কোটি টাকা খরচ হয়েছে নির্মাণকাজে। এর ৭২ শতাংশ কাজ পেয়েছে মাত্র ১৫টি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান, যারা কাদেরের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত এবং নিয়মিত কমিশন দিয়ে আসছিল।

বিশ্বব্যাংকের তথ্য বলছে, বাংলাদেশে সড়ক নির্মাণ খাতে প্রতি কিলোমিটার ব্যয় ভারত ও ইউরোপের তুলনায় অনেক বেশি। মূলত উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে প্রকল্প প্রস্তাবে ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ অতিরিক্ত ব্যয় দেখানো হতো, যার বড় অংশ যেত কমিশন হিসেবে।

সরকারি ক্রয় আইন অনুযায়ী, প্রকল্প অনুমোদন ও কার্যাদেশ দেওয়ার ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা থাকার কথা থাকলেও, বাস্তবে দেখা যায় কমিশন না দিলে ঠিকাদারদের কালো তালিকাভুক্ত করা হতো। শুধু ২০২৪ সাল পর্যন্ত ৪৪টি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কালো তালিকাভুক্ত করা হয়েছে কমিশনের টাকা না দেওয়ার অভিযোগে।

মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রম ছিল এমনভাবে সাজানো, যাতে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত প্রতিটি ধাপে অর্থ লেনদেন ও নিয়ন্ত্রণ সম্ভব হয়। ডিপিপি প্রস্তুতের সময়েই ঠিক করে রাখা হতো কে কাজ পাবে, কোন খাতে কত টাকা যাবে এবং কত কমিশন বরাদ্দ থাকবে। প্রকল্প অনুমোদনের ক্ষেত্রে পরিকল্পনা কমিশনেও ঘুষ দিতে হতো বলে অভিযোগ রয়েছে।

ওবায়দুল কাদের, তার স্ত্রী, ভাই ও আত্মীয়দের নামে অনেক প্রতিষ্ঠান কার্যাদেশ পেয়েছে, যার মাধ্যমে তিনি ও তার পরিবার উপকৃত হয়েছে বলে একাধিক সূত্রে জানা যায়। ক্ষমতাসীন দলের বেশ কয়েকজন প্রভাবশালী নেতাও এসব প্রতিষ্ঠানের পেছনে কাজ করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

কেবল অর্থ নয়, প্রকল্পের পরিকল্পনা, বাস্তবায়ন এবং অনুমোদনের প্রতিটি ধাপে দুর্নীতির বিস্তৃতি ছিল ভয়াবহ। কখনো হাওরের জমি অধিগ্রহণ করে সড়ক বানানো হয়েছে, যার ব্যবহার নেই বললেই চলে। কোথাও আবার পরিবেশগত ছাড়পত্র পেতে ঘুষ দিতে হয়েছে।

সবমিলিয়ে অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, ওবায়দুল কাদেরের মন্ত্রণালয় ছিল কমিশন নির্ভর এক দুর্নীতির কেন্দ্রবিন্দু। যেখানে যোগ্যতা নয়, কমিশনই ছিল কাজ পাওয়ার প্রধান শর্ত।

×