মঙ্গলবার, ১৭ই জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

রোমানিয়ায় মাত্র ৩ লাখ টাকায় চাকরি, বাংলাদেশিদের জন্য ইউরোপ যাওয়ার সুযোগ

আবাসন নিউজ২৪ | অনলাইন ডেস্কঃ

রোমানিয়ায় মাত্র ৩ লাখ টাকায় চাকরি

ছবি- এ আই জেনারেটেড

সাতক্ষীরা, শরীয়তপুর বা পিরোজপুরের মতো দেশের প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে তরুণেরা এখন ইউরোপের দেশ রোমানিয়ায় পাড়ি জমাচ্ছেন মাত্র ৩ থেকে ৩.৫ লাখ টাকা খরচে। এক সময় যেখানে ইউরোপের দেশ মানেই ছিল দূর স্বপ্ন, এখন সেখানে বৈধ চাকরির মাধ্যমে মাসে ৮০০ থেকে ১০০০ ইউরো আয় করছেন অনেকে। এমনকি কোম্পানি থেকে থাকা-খাওয়া ফ্রি থাকার সুযোগও দেওয়া হচ্ছে।

 

রোমানিয়া ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য হলেও দেশটিতে চরম শ্রমিক সংকট চলছে। বিশেষ করে নির্মাণ, ফ্যাক্টরি, কৃষি ও গুদাম খাতে ব্যাপক শ্রমিকের প্রয়োজন। বাংলাদেশ থেকে এসব সেক্টরে দক্ষ ও অদক্ষ শ্রমিক নেওয়ার প্রবণতা বাড়ছে।

 

বাংলাদেশি কর্মীরা বর্তমানে D/AV ও D/EM ক্যাটাগরির ওয়ার্ক পারমিট নিয়ে রোমানিয়ায় যাচ্ছেন। এই ভিসা একবারে দুই বছর মেয়াদি এবং বৈধভাবে নবায়নযোগ্য। বৈধ জব কনট্রাক্ট থাকলে এই ভিসার প্রক্রিয়া সহজে সম্পন্ন হয়। তবে সতর্ক থাকতে হবে ভুয়া দালাল ও প্রতারকদের থেকে।

 

সরকার অনুমোদিত এজেন্সির মাধ্যমে গেলে রোমানিয়ায় যেতে যে খরচ হয় তা সাধারণত নিচের মতো:

 

বায়োমেট্রিক পাসপোর্ট, পুলিশ ক্লিয়ারেন্স, মেডিকেল রিপোর্ট, একাডেমিক সার্টিফিকেট, জব কনট্রাক্ট (Sponsor Letter) সহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র প্রস্তুত করতে হয়। এরপর আবেদনকারীকে ভিসা প্রসেসিংয়ের জন্য ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা খরচ করতে হয়। এজেন্সির সার্ভিস চার্জ ১.৮০ থেকে ২.৫০ লাখ টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে। ফ্লাইট ও অন্যান্য খরচ মিলিয়ে মোট ৩ থেকে ৩.৫ লাখ টাকার মধ্যেই ইউরোপের রোমানিয়ায় বৈধভাবে যাওয়া সম্ভব।

 

এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ থেকে যারা রোমানিয়ায় গেছেন, তাদের অধিকাংশই ছোট খরচে বড় পরিবর্তন দেখতে পাচ্ছেন। সাতক্ষীরার জাহিদ হাসান জানান, তিনি ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে রোমানিয়ায় যান এবং এখন ফ্যাক্টরিতে চাকরি করছেন। মাসিক আয় প্রায় ৮৫০ ইউরো, যা দিয়ে তিনি পরিবারে স্বচ্ছলতা ফিরিয়ে এনেছেন। কোম্পানি থেকে থাকা এবং তিন বেলা খাওয়ার ব্যয়ও বহন করা হয় বলে জানান তিনি।

আরও পড়ুন  যুক্তরাষ্ট্রে মুসলমানদের ওপর হামলা ও বৈষম্য বেড়েছে ৭০%

 

তবে, সতর্ক না থাকলে বিদেশ যাওয়ার স্বপ্ন ভয়ংকর দুঃস্বপ্নে রূপ নিতে পারে। অনেক দালাল রয়েছে যারা ট্যুরিস্ট ভিসা দিয়ে লোক পাঠায়, অথচ সেটা দিয়ে কাজ করা অবৈধ। কেউ কেউ হাতে লেখা চুক্তিপত্র দেখিয়ে টাকা নিয়ে ভিসা দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়, কিন্তু পরে আর যোগাযোগ পাওয়া যায় না। এসব প্রতারণা এড়াতে বাংলাদেশ সরকারের প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় এবং বোইএসইএল (BOESL)-এর অনুমোদিত এজেন্সির মাধ্যমেই বিদেশে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।

 

সরকারের পক্ষ থেকে প্রতিটি জেলা কর্মসংস্থান অফিসে যাচাই-বাছাইয়ের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। ভিসা গ্রহণের আগে সংশ্লিষ্ট কোম্পানির লেটার অফ গ্যারান্টি, কর্মসংস্থান চুক্তিপত্র ও নিয়োগকর্তার বৈধতা যাচাই করা বাধ্যতামূলক।

 

রোমানিয়ায় এখন শ্রমিক নিয়োগের হার সবচেয়ে বেশি নির্মাণ ও ফ্যাক্টরি খাতে। গুদাম, কৃষি ও হোটেল-রেস্টুরেন্ট খাতেও বাংলাদেশি কর্মীদের সুযোগ রয়েছে। যারা ইংরেজি বা রোমানিয়ান ভাষা জানেন, তাদের জন্য সুপারভাইজার পদে কাজ পাওয়া সহজ হয়। তবে অদক্ষ শ্রমিকরাও সাধারণ ফিজিক্যাল লেবার হিসেবে স্থায়ী চাকরি পাচ্ছেন।

 

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, উন্নত জীবনের স্বপ্নে দেশের তরুণরা যদি বৈধ ও সঠিক পথে বিদেশে যান, তাহলে দেশের জন্যও তা হবে লাভজনক। কারণ প্রবাসীদের রেমিট্যান্স দেশের অর্থনীতির গুরুত্বপূর্ণ চালিকাশক্তি।

 

সততা, দক্ষতা এবং স্বচ্ছ পরিকল্পনায় বিদেশে যাওয়ার পথ অনেক সহজ হতে পারে। কিন্তু অন্ধবিশ্বাস, তাড়াহুড়া আর দালালের ফাঁদে পা দিলেই জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল হয়ে যেতে পারে।

 

সঠিক প্রস্তুতি, তথ্য যাচাই এবং নির্ভরযোগ্য এজেন্সির মাধ্যমেই রোমানিয়ায় যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলে তা একজন তরুণের জীবন বদলে দিতে পারে। হাজারো তরুণের জীবনে ইতিবাচক পরিবর্তনের সাক্ষী হচ্ছে ইউরোপের এই পূর্বাঞ্চলীয় দেশটি।

 

বাংলাদেশ থেকে যারা ইউরোপে স্বল্প খরচে নিরাপদ চাকরির খোঁজে রয়েছেন, তাদের জন্য রোমানিয়া হতে পারে ২০২৫ সালের সবচেয়ে বড় সুযোগ।

WhatsApp
Facebook
Twitter
LinkedIn
Email
Telegram