
দীর্ঘ আইনি লড়াই ও রাজনৈতিক চাপ সামলে অবশেষে নিজেদের পুরোনো প্রতীক ‘দাঁড়িপাল্লা’ ফিরে পেল জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ। বুধবার (৪ জুন) নির্বাচন কমিশন (ইসি) আনুষ্ঠানিকভাবে এ সিদ্ধান্ত জানায়।
নির্বাচন কমিশনার আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ সাংবাদিকদের জানান, “জামায়াতে ইসলামীর আবেদন এবং সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের রায় পর্যালোচনা করে কমিশনের পক্ষ থেকে দলটির নিবন্ধন ও প্রতীক ফিরিয়ে দিতে একমত হওয়া হয়েছে।”
সূত্র জানায়, সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের একটি রায়ে বলা হয়, রাজনৈতিক দল হিসেবে জামায়াতে ইসলামীর বাতিল হওয়া নিবন্ধন পুনরায় কার্যকর করতে হবে। সেই নির্দেশনার আলোকে জামায়াতের একটি প্রতিনিধি দল প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এএমএম নাসির উদ্দিনের সঙ্গে বৈঠক করে।
বৈঠকে অংশগ্রহণকারী জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ড. হামিদুর রহমান আযাদ জানান, “আমরা আমাদের আইনি অবস্থান ব্যাখ্যা করেছি। সিইসি আমাদের বক্তব্য শুনেছেন এবং ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন। আমরা আশাবাদী ছিলাম, শেষ পর্যন্ত সেই আশারই প্রতিফলন ঘটেছে।”
এর আগে গত রোববার (১ জুন) সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ও তিন বিচারপতির সমন্বয়ে গঠিত আপিল বিভাগ রাজনৈতিক দল হিসেবে জামায়াতে ইসলামীকে নিবন্ধন ফিরিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দেন। এই রায়ের ফলে নির্বাচন কমিশনের ওপর সাংবিধানিক দায়িত্ব পড়ে জামায়াতকে স্বীকৃতি দেওয়ার এবং তাদের আগের প্রতীক ‘দাঁড়িপাল্লা’ ফিরিয়ে দেওয়ার।
অনেক নাটকীয়তা ও আলোচনা-সমালোচনার পর জামায়াত ইসলামী আবারো দেশের নির্বাচনী রাজনীতিতে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণের পথ পেল। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, এ সিদ্ধান্ত দেশের রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে নতুন এক সমীকরণ তৈরি করতে পারে।
অন্যদিকে, ভোটারদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে। কেউ এটিকে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও আইনের শাসনের বিজয় হিসেবে দেখছেন, কেউবা অতীতের ইতিহাস মনে করে সংশয় প্রকাশ করছেন।
তবে যা-ই হোক, আদালতের রায় ও নির্বাচন কমিশনের সিদ্ধান্তে স্পষ্ট হয়েছে—আইন, বিচার এবং সংবিধানের আলোকে দলগুলোর অধিকার প্রতিষ্ঠা পায়।
এই সিদ্ধান্তের মাধ্যমে জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশের রাজনীতিতে আবারও সক্রিয় হতে যাচ্ছে—এবং সেই আগের চিহ্ন, দাঁড়িপাল্লা নিয়েই তারা মাঠে নামবে আগামী নির্বাচনগুলোতে।