
মোহামেডান, হৃদয় ও বিসিবির বিতর্কিত সিদ্ধান্ত: প্রশ্ন উঠছে নিয়ম, ন্যায় আর স্বাধীনতার
তাওহিদ হৃদয়কে ঘিরে সাম্প্রতিক একটি সিদ্ধান্ত আবারো আলোচনার কেন্দ্রে নিয়ে এসেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডকে (বিসিবি)। মোহামেডানের হয়েও মাঠে অসদাচরণ করায় এক ম্যাচের নিষেধাজ্ঞা পাওয়া হৃদয়কে নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে—আগামী মৌসুমে যদি তিনি অন্য দলে খেলেন, তবে সেই শাস্তি কীভাবে কার্যকর হবে? মোহামেডানের হয়ে পাওয়া শাস্তি কি অন্য ক্লাবের ওপর চাপিয়ে দেওয়া ন্যায্য?
এখানেই মূল আপত্তি। কারণ মোহামেডানের এই মৌসুমে আরও ম্যাচ বাকি থাকলেও শাস্তি কার্যকর না করে সেটি এক বছর পিছিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিসিবির ‘স্বাধীন’ টেকনিক্যাল কমিটি। তামিম ইকবালের নেতৃত্বে একটি বড় ক্রিকেটার দল বিসিবি সভাপতির সঙ্গে দেখা করে এই শাস্তি পেছানোর অনুরোধ জানায়। এর পরই আসে বিতর্কিত সিদ্ধান্ত।

ক্রিকেট প্রশাসনের সাবেক দায়িত্বপ্রাপ্ত এনামুল হক এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে পদত্যাগ করেছেন। তাঁর জায়গায় আসা নাজমূল আবেদীন, যিনি আবার বিসিবির পরিচালকও, তিনিই ‘স্বাধীন’ টেকনিক্যাল কমিটির নেতৃত্ব দিচ্ছেন। কিন্তু সেই কমিটি কেমন করে এত দ্রুত একটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত বদলে ফেলল, সেই প্রশ্নই ঘুরে বেড়াচ্ছে।
একটি মৌসুমের শাস্তি কেন পরবর্তী মৌসুমে গিয়ে কার্যকর হবে—এই প্রশ্নের জবাব মেলেনি। বিসিবি সভাপতি ফারুক আহমেদ এ বিষয়ে দায় নিতে নারাজ, বলছেন এটা কমিটির স্বাধীন সিদ্ধান্ত। অথচ ওই কমিটিই আবার বোর্ড পরিচালকের অধীনে কাজ করছে।
শুধু হৃদয়ের শাস্তি নয়, তামিমরা আরও দুটি ইস্যুতে বিসিবির ওপর চাপ সৃষ্টি করেছেন—প্রিমিয়ার লিগে একটি বিতর্কিত আউট নিয়ে দুর্নীতি দমন ইউনিটের অসঙ্গত তদন্ত এবং বিপিএলের স্পট ফিক্সিংয়ের সন্দেহভাজনদের নাম ফাঁস হওয়া। তবে সমালোচকরা বলছেন, এসব নিয়ে এতদিন চুপ থাকার পর হঠাৎ এই ‘আন্দোলন’ অনেকটা উদ্দেশ্যপ্রণোদিতই মনে হচ্ছে।

সব মিলিয়ে প্রশ্ন একটাই—ক্রিকেটীয় ন্যায়বিচার কি আসলে ক্লাব বা ব্যক্তির প্রভাবের কাছে অসহায় হয়ে পড়েছে? মোহামেডান, হৃদয়, কিংবা তামিম ইকবালের অবস্থান যতই আলোচিত হোক না কেন, বিসিবির এই সিদ্ধান্ত ভবিষ্যতে একটি মারাত্মক দৃষ্টান্ত হয়ে থাকতে পারে—যেখানে একটি দলের অপরাধের দায় অন্য দলকে বইতে হয়, আর নিয়ম চলে ব্যতিক্রমের ছায়ায়।