মঙ্গলবার, ১৭ই জুন, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

টেকনাফ স্থলবন্দর অচল

মোহাম্মদ ইউনুছ অভি টেকনাফ কক্সবাজার

প্রায় তিন মাস ধরে ইয়াংগুন থেকে কক্সবাজারের টেকনাফ স্থলবন্দর সীমান্ত বাণিজ্য আমদানি-রপ্তানি সাময়িকভাবে বন্ধ রেখেছে মিয়ানমারের জান্তা সরকার। ফলে বন্দর অনকেটা অচল বললে চলে। মূলত আরাকান আর্মি প্রতিবন্ধকার কারনে এ কার্যক্রম বন্ধ হয়েছে। তবে দেশটির বিদ্রোহী সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মির নিয়ন্ত্রিত রাখাইন রাজ্যে মংডু’র সাথে স্থলবন্দরে ছোট পরিসরে চালু রয়েছে আমদানি-রপ্তানি। এর ধারাবাহিকতায় সর্বশেষ গতকতাল বৃহস্পতিবার সকালে রাখাইন রাজ্যে থেকে ৩০ বস্তার একটি শুটকি ট্রলার টেকনাফ স্থলবন্দরে পৌছেছে।

এ তথ্য নিশ্চিত করে টেকনাফ স্থলবন্দর পরিচালনাকারী বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ইউনাইটেড ল্যান্ড পোর্টের ম্যানেজার সৈয়দ মোহাম্মদ আনোয়ার বলেন, ‘আজকে আরাকান আর্মির দখলে থাকা রাখাইন রাজ্যে থেকে শুটকিবাহি একটি ট্রলার এসেছে, সেটি খালাস চলছে।’
তিনি বলেন, ‘সর্বশেষ এর আগে গত ১৬ জানুয়ারীতে মিয়ানমারের ইয়াংগুন থেকে টেকনাফ স্থলবন্দরে পণ্যবাহি ট্রলার আসার পথে নাফনদ থেকে ট্রলারগুলো আটকে রাখে আরাকান আর্মি। এর কিছুদিন পর ট্রলারগুলো ফের ছেড়ে দেয়। তখন থেকে ভরসা না পাওয়ায় (১০ এপ্রিল) পর্যন্ত, ইয়াংগুন থেকে টেকনাফ স্থলবন্দরে উদ্দেশে কোন পণ্যবাহি ট্রলার ছাড়নি জান্তা সরকার। কিন্তু মংডু’র সাথে স্থলবন্দরে স্বল্প পরিসরে আমদানি-রপ্তানি চলমান রয়েছে। সব মিলিয়ে স্থলবন্দরের অবস্থা খুব মন্দা।’

এদিকে মিয়ানমারে বছরখানেক ধরেই রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে বাংলাদেশ-মিয়ানমারের প্রায় ২৭০ কিলোমিটার সীমান্ত দখলে নেয় দেশটির বিদ্রোহী সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মি। এর ধারাবাহিকতায় গত বছরের নভেম্বর মাস থেকে হামলা চালিয়ে রাখাইন রাজ্যের ১৭টি শহরের মধ্যে ১৪ টির নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে বলে সে দেশের গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে জানা গেছে। গত বছরের ৮ ডিসেম্বর আরাকান আর্মি রাখাইন রাজ্যের মংডু টাউনশিপসহ সীমান্তের অধিকাংশ এলাকায় পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার দাবি করে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে বিবৃতি দিয়েছিল। রাখাইনে বাংলাদেশ সীমান্তে বর্তমানে অনেকটাই কোণঠাসা মিয়ানমারের সেনা ও নৌবাহিনী। এর পর থেকে নাফ নদীতে তাঁদের জলসীমায় নৌযান চলাচলের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়।

আরও পড়ুন  এবার টেকনাফ-মংডু সীমান্ত বাণিজ্য বন্ধ

টেকনাফ স্থলবন্দরের শ্রমিক নেতা নুরুল ইসলাম বলেন, ‘বিশ বছর ধরে স্থলবন্দরে শ্রমিক হিসেবে কাজ করেছি। এমন অবস্থা খারাপ অবস্থা হয়নি। কিন্তু সেদেশে যুদ্ধের পর থেকে আট-নয় মাস থেকে বন্দরে খুব কম পণ্য আসছে। যার কারনে শ্রমিকদের আয় বন্ধ হওয়ার পথে। এভাবে চলতে থাকলে না খেয়ে থাকতে হবে আমাদের। আমাদের একটা চাওয়া মিয়ানমারের দুই পক্ষের সাথে সু-সর্ম্পক বৃদ্ধি করে যাতে আগের মতো পণ্য আমদানি-রপ্তানি চালু করা হয়।’

বন্দরের কাস্টম কর্মকর্তারা জানায়, গত ২০২৪-২৫ অর্থ বছরের ১ লা জুলাই থেকে ৩১ মার্চ পর্যন্ত ১৪ হাজার ৯ শত ৫৭ মেট্রিক টন পণ্যে আমদানি হয়েছে। এর বিপরীতে সরকার ১০৮ কোটি ২৩ লক্ষ ৬৬ হাজার ৩ শত ১২ টাকা রাজস্ব পায়। গেল বছর (২০২৩-২৪) অর্থ বছরের জুলাই থেকে ২৪ সালের মার্চ পর্যন্ত ৫৯ হাজার ৯ শত ৬৮ মেট্রিক টন আমদানি হয়। যার ফলে সরকার ৩৫৬ কোটি ৫১ লক্ষ ৩৪ হাজার ৭ শত ২৩ টাকা রাজস্ব পায় সরকার। রাখাইনে যুদ্ধের প্রভাবে গত বছরের তুলনায় ২৪৭ কোটি ২৭ লক্ষ ৬৮ হাজার ৪ শত ১১ টাকার রাজস্ব আদায় কম হয়েছি।

অন্যদিকে গত দুই অর্থ বছরে যেসব পণ্যে রপ্তানি হয়েছে। তার মধ্য উল্লেখযোগ্য হচ্ছে সিমেন্ট, আলু ও প্লাস্টিক প্রোডাক্ট। ইয়াংগুনের সাথে টেকনাফ স্থলবন্দরে আমদানি-রপ্তানি বন্ধ থাকলেও চালু রয়েছে মংডুর সাথে। গত ২০২৪-২৫ অর্থ বছরের ২৫ সালের মার্চ পর্যন্ত প্রায় ৯.৬৪ কোটি টাকা দামের ৭ হাজার ১১৭ টন বিভিন্ন পণ্য রপ্তানি হয়েছে। গেল বছর (২০২৩-২৪) অর্থ বছরের জুলাই থেকে ২৫ সালের মার্চ পর্যন্ত পওায় ২.৪১ কোটি টাকা দামের ৬৯১ মেট্রিক টন পণ্য রপ্তানি হয়।

এ বিষয়ে টেকনাফ স্থলবন্দর রাজস্ব কর্মকর্তা মো. সোহেল উদ্দিন বলেন, ‘ আরাকান আর্মি সীমান্ত দখলের পর প্রায় তিন মাস ধরে ইয়াংগুন থেকে টেকনাফ স্থলবন্দরে পণ্য আমদানি-রপ্তানি বন্ধ রয়েছে। যার কারনে রাজস্ব ধস নেমেছে। তবে রাখাইন রাজ্যে বাংলাদেশের সঙ্গে আমদানি-রপ্তানি চলমান রয়েছে।

আরও পড়ুন  মুক্তিপণে ব্যর্থ হলে পাচার করে দিচ্ছে মালয়েশিয়ায়

আরও পড়ুনঃ আন্দোলনের প্রস্তুতি? গোপনে ঢাকামুখী হচ্ছেন আওয়ামী নেতাকর্মীরা

WhatsApp
Facebook
Twitter
LinkedIn
Email
Telegram