| ৪ আগস্ট ২০২৫
শিরোনাম:

আরও ৫ জন প্রশ্নপত্র ফাঁসে অভিযুক্ত, আছেন পিএসসির কর্মকর্তা, অফিস সহায়ক, গাড়িচালকও

আরও ৫ জন প্রশ্নপত্র ফাঁসে অভিযুক্ত, আছেন পিএসসির কর্মকর্তা, অফিস সহায়ক, গাড়িচালকও

রেলওয়ের একটি নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনায় সরকারি কর্মকমিশনের (পিএসসি) ছয় কর্মকর্তা-কর্মচারী গ্রেপ্তার হয়ে এখন কারাগারে। কেবল এই ছয়জনই নন, প্রশ্নপত্র ফাঁসের সঙ্গে জড়িত হিসেবে পিএসসির আরও পাঁচ কর্মকর্তা-কর্মচারীর নাম সামনে এসেছে; যাঁরা বিভিন্ন সময় ক্যাডার ও নন-ক্যাডার পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁসে জড়িত ছিলেন। তাঁদের মধ্যে মধ্যম পর্যায়ের কর্মকর্তা আছেন। আবার অফিস সহায়ক ও গাড়িচালকও আছেন।

এই পাঁচজন হলেন পিএসসির পরিচালক এনামুল বশির, সহকারী পরিচালক আবদুর রউফ, সহকারী পরিচালক নিখিল চন্দ্র রায়, অফিস সহায়ক ডন কুমার ও গাড়িচালক আতাউর রহমান।

পিএসসি সূত্র থেকে জানা গেছে, প্রশ্নপত্র ফাঁসে জড়িত থাকার অভিযোগে এই পাঁচজনকেই একসময় চাকরিচ্যুত করেছিল পিএসসি। পরে এনামুল বশির ও আবদুর রউফ প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনাল ও আদালতের মাধ্যমে চাকরি ফিরে পান। অফিস সহায়ক ডন কুমার ও গাড়িচালক আতাউর রহমান চাকরিচ্যুত হয়েছেন দুই বছর আগে। সহকারী পরিচালক নিখিল চন্দ্র রায় গত বছর অবসরে গেছেন।

অভিযুক্ত ব্যক্তিদের কয়েকজনকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছিল। পরে আইনি প্রক্রিয়ায় তাঁরা চাকরি ফিরে পান। অবসরে গিয়েও অপকর্মে জড়িত কেউ কেউ।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, পিএসসির পরিচালক এনামুল বশিরের বিরুদ্ধে ২০০৯ সালে বিআরটিএর মোটরযান পরিদর্শক নিয়োগ পরীক্ষায় জালিয়াতির অভিযোগ ওঠে। এই অভিযোগে তাঁকে ২০১১ সালে চাকরিচ্যুত করা হয়। ওই বছরই তিনি প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনাল ও আদালতে যান। ২০২১ সালে তিনি চাকরি ফিরে পান। গত বছরের মার্চে তিনি অবসরে যান। অবশ্য এনামুল বশির গতকাল বুধবার প্রথম আলোর কাছে দাবি করেন, তাঁর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র হয়েছিল।আবদুর রউফের বিরুদ্ধে প্রশ্নপত্র ফাঁসে জড়িত থাকার অভিযোগ ওঠে ২০১০ সালে। তখন তাঁর বিরুদ্ধে মামলা হয়, তাঁকে গ্রেপ্তারও করে পুলিশ। ওই ঘটনায় পিএসসি তাঁকে সাময়িক বরখাস্ত করে। প্রশ্নপত্র ফাঁসের সত্যতা পাওয়ায় ২০১৩ সালে আবদুর রউফকে চাকরিচ্যুত করা হয়। পরে তিনি প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনালে যান। আইনি প্রক্রিয়া শেষে গত বছর চাকরি ফিরে পান। এরপর আবদুর রউফ প্রশাসনিক কর্মকর্তা থেকে পদোন্নতি পেয়ে সহকারী পরিচালক হন।

আবদুর রউফ গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, তাঁকে ২০১০ সালে পুলিশ সন্দেহবশত গ্রেপ্তার করেছিল; কিন্তু কোনো অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় পরে তাঁকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।

বিভিন্ন সময় প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনায় জড়িত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে সাংবিধানিক সংস্থা পিএসসি কেন ফৌজদারি মামলা করেনি, সে প্রশ্ন থেকে যায়।
মোহাম্মদ ফিরোজ মিয়া, সরকারি চাকরির বিষয়ে বিশেষজ্ঞ
তবে রেলের নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনায় ৫ জুলাই পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার উপপরিচালক মো. আবু জাফর পিএসসির যে শাখা দেখতেন, সেই শাখায় সহকারী পরিচালক পদে রয়েছেন আবদুর রউফ। দুজন পাশাপাশি রুমে বসেন। এই শাখা (ইউনিট ১২) থেকে রেলওয়ে, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়, পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন নন–ক্যাডার পরীক্ষার প্রশ্নপত্র প্রণয়ন করা হয়।

ডন কুমার ২০২২ সালের ১ জানুয়ারি পিএসসিতে অফিস সহায়ক পদে যোগ দিয়েই প্রশ্নপত্র ফাঁসেও জড়িয়ে পড়েন। পিএসসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, চাকরি দেওয়ার কথা বলে পটুয়াখালী সদর উপজেলার ইমরুল ইসলামের কাছ থেকে ছয় লাখ টাকা নেন ডন কুমার; যার কারণে ২০২২ সালেই তাঁকে চাকরিচ্যুত করা হয়। পরে তিনি প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। তাঁর মামলা এখনো চলমান।

প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযুক্ত হয়ে পুনরায় চাকরিতে ফিরে আসার বিষয়ে জানতে চাইলে পিএসসির যুগ্ম সচিব আবদুল আলীম খান গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা কাউকে চাকরিচ্যুত করলে তিনি প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনালে যান। পরে আদালতের দ্বারস্থ হন। সরকারি প্রতিষ্ঠান হিসেবে আদালতের আদেশ শোনা আমাদের জন্য বাধ্যতামূলক।’ তিনি বলেন, পিএসসি তদন্তকারী সংস্থা নয়। অনেক ক্ষেত্রে ব্যবস্থা নিতে দুদকে চিঠি দেওয়া হয়। এর বাইরে আর কিছু করার থাকে না।

এই পাঁচজন হলেন পিএসসির পরিচালক এনামুল বশির, সহকারী পরিচালক আবদুর রউফ, সহকারী পরিচালক নিখিল চন্দ্র রায়, অফিস সহায়ক ডন কুমার ও গাড়িচালক আতাউর রহমান।
সর্বশেষ রেলের প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনায় গ্রেপ্তার পাঁচ কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে তদন্ত করতে দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) গতকাল চিঠি দিয়েছে পিএসসি।

পিএসসির গাড়িচালক আতাউর রহমানের বিরুদ্ধেও প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগ রয়েছে। পিএসসির দাপ্তরিক তথ্য বলছে, তিনি চাকরি পাইয়ে দেওয়ার কথা বলে হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলার সলিল বরণ দাসের কাছ থেকে ১৪ লাখ টাকা নেন। এই ঘটনায় ২০২২ সালে তাঁকে চাকরিচ্যুত করা হয়।

সহকারী পরিচালক নিখিল চন্দ্র রায়ের বিরুদ্ধেও প্রশ্নপত্র পত্র ফাঁসের অভিযোগ রয়েছে। তিনি গত বছর অবসরে যান। তবে গত শুক্রবার রেলওয়ের উপসহকারী প্রকৌশলী পদে নিয়োগ পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁসের সঙ্গে জড়িত হিসেবে তাঁর নাম আসে। তিনি এখন পলাতক।

পিএসসির ভেতরেই প্রশ্নপত্র ফাঁসের একটি চক্র কাজ করছে। এর মধ্যে কেউ ধরা পড়েছেন, কেউ এখনো আড়ালে রয়ে গেছেন।
সরকারি চাকরির বিধিবিধান বিশেষজ্ঞ ও সাবেক অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ ফিরোজ মিয়া
রেলের এই নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনায় ৫ জুলাই ১৭ জনকে গ্রেপ্তার করে সিআইডি। গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের মধ্যে ছয়জনই পিএসসির সাবেক ও বর্তমান কর্মকর্তা-কর্মচারী। তাঁরা হলেন উপপরিচালক মো. আবু জাফর ও জাহাঙ্গীর আলম; সহকারী পরিচালক মো. আলমগীর কবির, কর্মচারী (ডেসপাচ রাইডার) মো. খলিলুর রহমান ও অফিস সহায়ক সাজেদুল ইসলাম এবং সাবেক গাড়িচালক সৈয়দ আবেদ আলী। এই ব্যক্তিরা প্রায় দেড় যুগ ধরে প্রশ্নপত্র ফাঁসের সঙ্গে জড়িত বলে সিআইডি সূত্রে জানা গেছে। এঁদের কয়েকজন দোষ স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দিও দিয়েছেন।

সরকারি চাকরির বিধিবিধান বিশেষজ্ঞ ও সাবেক অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ ফিরোজ মিয়া প্রথম আলোকে বলেন, পিএসসির ভেতরেই প্রশ্নপত্র ফাঁসের একটি চক্র কাজ করছে। এর মধ্যে কেউ ধরা পড়েছেন, কেউ এখনো আড়ালে রয়ে গেছেন। তিনি বলেন, বিভিন্ন সময়ে নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনায় জড়িত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে সাংবিধানিক সংস্থা পিএসসি কেন ফৌজদারি মামলা করেনি, সে প্রশ্ন থেকে যায়।

নোয়াখালীতে ৪ ছিনতাইকারী আটক

আরও ৫ জন প্রশ্নপত্র ফাঁসে অভিযুক্ত, আছেন পিএসসির কর্মকর্তা, অফিস সহায়ক, গাড়িচালকও

‎নোয়াখালীর সেনবাগে ৪ ছিনতাইকারীকে আটক করেছে সেনবাগ থানা পুলিশ।

‎সোমবার ( ৪ আগস্ট ) নোয়াখালীর সেনবাগে ৪ছিনতাইকারীকে হাতেনাতে ধৃত করে গণধোলাই দেওয়ার সময় সেনবাগ থানা পুলিশ আটক করে, নোয়াখালী চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে । প্রকাশ, নোয়াখালীর পুলিশ সুপার মোঃ আব্দুল্লাহ্-আল-ফারুক এর দিক নির্দেশনায় সেনবাগ থানার অফিসার ইনচার্জ এস এম মিজানুর রহমান এর তত্ত্বাবধানে এসআই(নিরস্ত্র) সনৎ বড়ুয়া, এসআই(নিরস্ত্র) মোহাম্মদ জাকির হোসেন, এএসআই(নিরস্ত্র) তরুণ কান্তি শর্মা ও সঙ্গীয় ফোর্সসহ ৩ আগস্ট তারিখে সেনবাগ থানাধীন ৭নং মোহাম্মদপুর ইউপিস্থ ফেনী-নোয়াখালী মহাসড়কে মেসার্স আলাউদ্দিন ফিলিং স্টেশনের সামনে রাস্তার উপর সিএনজি যোগে যাত্রীবেশে ৪জন ছিনতাইকারী ভিকটিম বকুল নাহার প্রঃ মনোয়ারা বেগম এর নিকট হতে ১টি ৬আনা ওজনের স্বর্ণের চেইন, মূল্য অনুমান-৬০,০০০/-(ষাট হাজার) টাকা, ১টি OPPO স্মার্ট মোবাইল, মূল্য অনুমান-১৮,০০০/-(আঠার হাজার) টাকা, নগদ-২০০/-(দুইশত) টাকা জোর পূর্বক ছিনাইয়া নিয়ে পালানোর সময় ভিকটিমের চিৎকারে  স্থানীয় লোকজন ছিনতাইকারীদের পেছন পেছন ধাওয়া করে খলিল মিয়ার হাটে বেরিকেট দিয়ে আটক করে গণপিটুনি দিয়ে পুলিশ ও সেনাবাহিনীকে সংবাদ প্রদান করে। পুলিশ ও সেনাবাহিনী ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে উত্তেজিত জনরোষ হইতে ছিনতাইকারীদের উদ্ধার পূর্বক হেফাজতে নিয়ে সেনবাগ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হইতে প্রাথমিক চিকিৎসা সেবা প্রদান করে।


‎আটককৃতরা হলো- ১। মোঃ হক সাহেব প্রঃ খালেক(৪০), পিতা-মৃত আব্দুর সহিদ, মাতা-জাহানারা খাতুন, সাং-ধর্মপুর(রশিদ ড্রাইভারের বাড়ী), থানা-নোয়াখালী সদর(সুধারাম), ২। মোঃ নুর নবী(৪৫), পিতা-তছির আহম্মেদ, মাতা-সোহাগের নেছা, সাং-পূর্ব চরখেলা কোপা(আালাউদ্দিন কোম্পানীর বাড়ী), থানা-রামগতি, জেলা-লক্ষ্মীপুর, ৩। ফজলে রাব্বি প্রঃ রনি(২৮), পিতা-মৃত মানিক মিয়া, মাতা-হোসনে আরা বেগম, সাং-ধর্মপুর(হাজীরহাট, মজু মাস্টার বাড়ী), থানা-নোয়াখালী সদর(সুধারাম), সর্ব জেলা-নোয়াখালী, ৪। মোঃ জুয়েল হোসেন(৩৩), পিতা-মোঃ বাদশা মিয়া, মাতা-রিজিয়া বেগম, সাং-সিংহখালী (তহসিলদার বাড়ী), থানা-ভান্ডারিয়া, জেলা-পিরোজপুর, বর্তমান সাং-পূর্ব কুলগাঁও(জাবেদের ভাড়া বাসা), অক্সিজেন, থানা-বায়েজিদ বোস্তামী, চট্টগ্রাম।


‎সেনবাগ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) এসএম মিজানুর রহমান জানান, ছিনতাই এর ঘটনায় ভিকটিমের দায়েরকৃত এজাহারের প্রেক্ষিতে সেনবাগ থানার মামলা রুজু পূর্বক আসামীদেরকে নোয়াখালী চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে।

বিশেষ প্রতিবেদকঃ
প্রকাশিত: ৪ আগস্ট, ২০২৫, ২:১৮ পিএম

রূপগঞ্জে অনুমোদনহীন ‘প্রিমিয়াম টাউন’ প্রকল্প: প্রিমিয়াম হোল্ডিং লিমিটেডের প্রতারণার ফাঁদে বিনিয়োগকারীরা

আরও ৫ জন প্রশ্নপত্র ফাঁসে অভিযুক্ত, আছেন পিএসসির কর্মকর্তা, অফিস সহায়ক, গাড়িচালকও

রূপগঞ্জের কৃষিজমির ওপর অনুমতি ছাড়াই সাইনবোর্ড বসিয়ে চলছে অনুমোদনহীন অবৈধ প্রিমিয়াম টাউন প্রকল্পের প্রতারণা।

রাজধানীর অদূরে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে আবাসন খাতে ভয়াবহ অনিয়ম ও প্রতারণার চিত্র উন্মোচিত হয়েছে। প্রিমিয়াম হোল্ডিং লিমিটেড নামের একটি কোম্পানি ২০২১ সাল থেকে অনুমোদন ছাড়াই ‘প্রিমিয়াম টাউন’ নামে কথিত আবাসন প্রকল্প চালাচ্ছে। রাজউক, জেলা প্রশাসন বা স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের কোনো অনুমোদন না নিয়েই গ্রাহকদের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।কৃষিজমির ওপর অনুমোদনহীন ‘প্রিমিয়াম টাউন’ প্রকল্পের সাইনবোর্ড

সাইনবোর্ডের আড়ালে প্রতারণাঃ

কথিত প্রকল্পটি রূপগঞ্জ উপজেলার দাউদপুর ইউনিয়নের আগলা গ্রামের আগলা মৌজায় অবস্থিত। সেখানে বাস্তবে কোনো উন্নয়ন কাজ নেই। শুধু সাইনবোর্ড বসিয়ে বুকিংয়ের নামে চলছে অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার মহোৎসব।

স্থানীয় জমির মালিক আলাউদ্দিন, চান মিয়া ও সিরাজ বেপারী ক্ষোভ প্রকাশ করে আবাসন নিউজ২৪- কে বলেন—
আমাদের অনুমতি ছাড়াই কৃষিজমিতে সাইনবোর্ড বসানো হয়েছে। প্রতিবাদ করলে সন্ত্রাসী দিয়ে ভয় দেখানো হয়। জমি আমাদের একমাত্র সম্বল, অথচ সেটির ওপর ভুয়া প্রজেক্টের নাম দিয়ে প্রতারণা চলছে। তারা আরও অভিযোগ করেন, কোম্পানির মালিকরা দালালের মাধ্যমে ভুয়া কাগজ কিনছে। এসব কাগজে নামমাত্র দলিল থাকলেও খতিয়ান/হোল্ডিং এ জমি নেই। গ্রাহকদের বলা হচ্ছে, রেজিস্ট্রেশন পেলেই তো আপনি জমি পেয়ে গেলেন। কিন্তু এই জমি কখনো হস্তান্তর করা সম্ভব নয়।

 

গ্রাহকেরা বলছেন—আইনগত ব্যবস্থা নিয়েছিঃ

মাদারীপুরের গ্রাহক আব্দুল্লাহ মজুমদার (প্রবাসী, ইতালি) বলেন,
বিদেশ থেকে টাকা পাঠানোর পর রেজিস্ট্রেশনের জন্য গেলে নানা অজুহাত দেখানো হয়। পরে সরাসরি অফিসে গেলে আমাকে হুমকি দেওয়া হয়— মামলা করলে খারাপ হবে। আমি এখন আইনগত ব্যবস্থা নিয়েছি।

সিলেটের গ্রাহক মোহাম্মদ রাশেদুল ইসলাম বলেন,
আমি গত বছর বুকিং দিই। তারা প্রতিশ্রুতি দেয় ছয় মাসের মধ্যে রেজিস্ট্রেশন হবে। কিন্তু আজও কিছু হয়নি। অফিসে গিয়ে জিজ্ঞেস করলে শুধু বলা হয় আর কিছুদিন সময় লাগবে কাগজপত্র ঠিক করা হচ্ছে রেজিস্ট্রেশনের জন্য। এভাবে আবার মাসের পর মাস চলে যায় তবুও তারা রেজিস্ট্রেশন দিচ্ছে না সকল টাকা পরিশোধের পরেও। প্রতারিত হয়েছি তাই কোন উপায় না পেয়ে আমি কোর্টে মামলা করেছি।

সাতক্ষীরার গ্রাহক সালমা আক্তার বলেন,
বিজ্ঞাপন দেখে টাকা দিয়েছিলাম। পরে বুঝলাম খতিয়ান মিলছে না। বারবার অফিসে গিয়েও সমাধান পাইনি। আমি লিখিত অভিযোগ করেছি এবং আইনি পদক্ষেপ নিয়েছি।

 

কোম্পানির আর্থিক অসঙ্গতি ও সন্দেহজনক প্রোফাইলঃ

রেজিস্ট্রার অব জয়েন্ট স্টক কোম্পানিজের তথ্য অনুযায়ী, প্রিমিয়াম হোল্ডিং লিমিটেড নিবন্ধিত হয়েছে ২০২১ সালের ১ আগস্ট (নিবন্ধন নম্বর: সি-১৭২৭৭১)। অথরাইজড মূলধন ১ কোটি টাকা এবং পেইড-আপ মূলধন ৫০ লক্ষ টাকা হলেও এখনো সেই অর্থ ব্যাংকে জমা হয়নি।

কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদে রয়েছেনঃ

(১).নূর মোহাম্মদ, চেয়ারম্যান – ২৫০০ শেয়ার (২).মোঃ রওশন আল মাহমুদ, ব্যবস্থাপনা পরিচালক – ৪৭,০০০ শেয়ার এবং (৩).নাজনীন আক্তার, পরিচালক-৫০০ শেয়ার।

গুরুত্বপূর্ণ তথ্যঃ ২০২১ সালের পূর্বে মালিকদের কোনো ধরনের টিআইএন সার্টিফিকেট ছিল না। অথচ এখন তারা কোটি কোটি টাকার মালিক। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শুধু কোম্পানি নিবন্ধন করে কোনো বিনিয়োগ ছাড়া সাইনবোর্ড ভাড়া নিয়ে প্রতারণা করা হচ্ছে।

 

প্রকল্প অনুমোদনবিহীন—ইউনিয়ন পরিষদের মন্তব্যঃ

দাউদপুর ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আব্দুর রাজ্জাক সিকদার বলেন—
২০২১ সাল থেকে এরা অবৈধভাবে প্রকল্প চালাচ্ছে। আমাদের কাছ থেকে কোনো অনুমোদন নেয়নি। আমরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে জানিয়েছি, দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

 

ব্যবস্থাপনা পরিচালকের বিতর্কিত বক্তব্যঃ

প্রিমিয়াম হোল্ডিং লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ রওশন আল মাহমুদ বলেন—
আমরা মাত্র চার বছর হলো প্রকল্পের কাজ শুরু করেছি। অনুমোদনের প্রক্রিয়া শেষ করতে পারিনি। অনেক কোম্পানি আছে যারা ২০ বছর ধরে কাজ করছে, তাদেরও সব কাগজপত্র হয়নি। আমরা ভবিষ্যতে অনুমোদন নেব। আপনারা নেতিবাচক সংবাদ করবেন না, বরং অফিসে এসে দেখা করুন।

তাকে প্রশ্ন করা হয়—দাউদপুর ইউনিয়ন পরিষদ থেকে এনওসি নিয়েছেন কিনা? এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বিষয়টি এড়িয়ে যান এবং বলেন, “আমি ব্যস্ত আছি।” পরে তিনি ফোন কেটে দেন।

 

প্রশাসনের কঠোর অবস্থানঃ

নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সিনিয়র সহকারী কমিশনার (ভূমি অধিগ্রহণ) টিএম রাহসিন কবির আবাসন নিউজ২৪- কে বলেন—
প্রিমিয়াম হোল্ডিং লিমিটেড  জমি অধিগ্রহণের অনুমোদন নেয়নি। অনুমোদন ছাড়া কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়া সম্পূর্ণ বেআইনি। অভিযোগ পেলে আমরা দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা নেব।

রূপগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ সাইফুল ইসলাম বলেন—আমরা মৌখিকভাবে জেনেছি প্রিমিয়াম হোল্ডিংস লিমিটেড অবৈধভাবে গ্রাহকদের কাছ থেকে টাকা নেওয়া হচ্ছে। এ ঘটনার সত্যতা পেলে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে প্রিমিয়াম হোল্ডিংস লিমিটেডের বিরুদ্ধে।

রূপগঞ্জের সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোঃ তারিকুল আলম বলেন—
প্রিমিয়াম হোল্ডিংস লিমিটেডের  জমি অধিগ্রহণের কোন অনুমোদন দেওয়া হয়নি। যদি অনুমোদন ছাড়া অবৈধ প্রকল্পে জমি বিক্রি করেন এ বিষয়ে অভিযোগ পেলে তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। অনুমোদন ছাড়া কোনো প্রকল্প চালানো আইনত অপরাধ।

রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার মোঃ রিয়াজুল ইসলাম বলেন—
রাজউকের অনুমোদন ছাড়া কোনো প্রকল্প চালানো বেআইনি। প্রিমিয়াম হোল্ডিংস লিমিটেডের কোন প্রকল্প রাজউক থেকে অনুমোদন দেওয়া হয়নি। বিনিয়োগকারীদের সতর্ক থাকতে হবে। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। তিনি এ অনুমোদনহীন প্রকল্প থেকে বিনিয়োগকারীদের প্লট কেনা থেকে সতর্ক করেন।

 

বিশেষজ্ঞের সতর্কবার্তাঃ

সাবেক এক রাজউক কর্মকর্তা বলেন—
প্রিমিয়াম হোল্ডিংস লিমিটেডের মতো কোম্পানিগুলো কখনো গ্রাহকদের জমি হস্তান্তর করতে পারবে না। তারা শুধুমাত্র শত কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে একসময় অদৃশ্য হয়ে যাবে। বিনিয়োগকারীদের সতর্ক থাকতে হবে।

 

আইন বিশেষজ্ঞের মতামতঃ

ব্যারিস্টার কামরুল হাসান বলেন—
স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়, জেলা প্রশাসক এবং রাজউকসহ আরোও প্রয়োজনীয় অনুমোদন ছাড়া কোনো আবাসন প্রকল্প চালানো অপরাধ। এ ধরনের কর্মকাণ্ড দণ্ডবিধি অনুযায়ী ফৌজদারি অপরাধ এবং শাস্তিযোগ্য।

 

দুদকের সতর্কবার্তা

দুর্নীতি দমন কমিশনের মহাপরিচালক (বিশেষ তদন্ত) মীর মোঃ জয়নুল আবেদিন শিবলী বলেন—
অভিযোগ পেলে দুদক অবশ্যই তদন্ত করবে। অনুমোদন ছাড়া জমি বিক্রি করে গ্রাহক প্রতারণা গুরুতর অপরাধ।

পান্থ হত্যা মামলা মেনন ইনু ও পলককে আদালতে গ্রেপ্তার দেখানো হলো

আরও ৫ জন প্রশ্নপত্র ফাঁসে অভিযুক্ত, আছেন পিএসসির কর্মকর্তা, অফিস সহায়ক, গাড়িচালকও

এইচএসসি পরীক্ষার্থী মাহাদী হাসান পান্থ হত্যার অভিযোগে কদমতলী থানায় দায়ের হওয়া মামলায় সাবেক সমাজকল্যাণ মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন, সাবেক তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু ও সাবেক আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলককে গ্রেপ্তার দেখানোর আদেশ দিয়েছে আদালত।

সোমবার (৪ আগস্ট) ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. সেফাতুল্লাহ শুনানি শেষে এই আদেশ দেন।

সকালেই তিনজনকে আদালতে হাজির করা হয়। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কদমতলী থানার উপ-পরিদর্শক মো. আরিফ হোসেন তাদের গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন করেন। এরপর সকাল সাড়ে ১০টার দিকে পুলিশের কড়া প্রহরায় আদালতের সামনে হাজির করা হয় অভিযুক্তদের।

আদালতের সিঁড়ি বেয়ে উঠার সময় মেনন, ইনু এবং পলক—এই তিনজনই ক্লান্ত হয়ে পড়েন। ইনু জানান, তার হৃদযন্ত্রে সমস্যা রয়েছে, ফলে কিছু সময় থেমে যান তারা। পরে আদালতের তৃতীয় ও চতুর্থ তলায় উঠে কাঠগড়ায় দাঁড়ান তারা। শুনানি শেষে বিচারক তাদের গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন অনুমোদন করেন।

এরপর পুলিশের প্রহরায় তাদের পঞ্চম তলার লিফট হয়ে হাজতখানায় পাঠানো হয়।

 মামলার পটভূমি: ২০২৪ সালের ১৯ জুলাই, ঢাকার কদমতলী এলাকায় জুলাই আন্দোলনের সময় তোলারাম কলেজের এইচএসসি পরীক্ষার্থী মাহাদী হাসান পান্থ গুলিবিদ্ধ হন। অভিযোগ অনুযায়ী, আন্দোলনের সময় আসামিদের ছোড়া গুলিতে মাহাদীর মুখ দিয়ে গুলি ঢুকে মাথার পেছন দিয়ে বেরিয়ে যায়।

পরবর্তীতে ৮ নভেম্বর কদমতলী থানায় এই হত্যাকাণ্ডের মামলা দায়ের করা হয়, যেখানে রাশেদ খান মেনন (৭ নম্বর), ইনু (৮ নম্বর), ও পলক (৯ নম্বর) হিসেবে এজাহারভুক্ত আসামি।

×